বৃহস্পতিবার, ৩১ মে, ২০১২

বাংলাদেশে সংবাদ মাধ্যমের ওপর সরকারি হামলা


ব দ রু দ্দী ন উ ম র
আজ থেকে ঠিক দু’বছর আগে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন তথাকথিত মহাজোট সরকারের পুলিশ দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা অফিসে হামলা চালিয়ে পত্রিকাটির সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করেছিল এবং পত্রিকার প্রেসে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ স্বাধীন বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে দেখিয়ে দিয়েছে জনগণের ওপর নির্যাতন, অপহরণ, গুম খুন, সংবাদপত্রের ওপর হামলায় তারা কতখানি পারদর্শী। কাজেই এসব ক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতা এবং কৌশলগত দক্ষতা অন্য যে কোনো দলের থেকেই বেশি। যদিও শাসক শ্রেণীর অন্য দলও ক্ষমতায় থাকার সময় একই ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে চেষ্টার ত্রুটি রাখে না।
১৯৭৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিব বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা জারি করে জনগণের ওপর নির্যাতনের যে স্টিমরোলার চালিয়েছিলেন, সেটা তার শাসনকে কলঙ্কিত করেছিল এবং সেটাই তার উত্খাতের প্রধান কারণ ছিল। শেখ মুজিব সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ যেভাবে করেছিলেন তার তুলনা একমাত্র প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ১৯৭১ সালের নয় মাসের শাসন ছাড়া পাকিস্তান আমলে এবং আজ পর্যন্ত যত সরকার এসেছে তার কোনোটির আমলেই পাওয়া যাবে না। স্বাধীনতার লড়াইয়ের পর জনগণকে এভাবে যে ‘স্বাধীনতা’ শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ দান করেছিল, ঐতিহাসিক রেকর্ড থেকে সেটা মুছে ফেলা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। দুষ্ট প্রকৃতির মতলববাজ লোক ছাড়া এ চিন্তা করাও কারও পক্ষে সম্ভব নয়।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ইয়াহিয়ার সামরিক বাহিনী আমাদের জনগণের ওপর ব্যাপক ও নিষ্ঠুর আক্রমণ পরিচালনা শুরু করার সময় শেখ মুজিব নিজে বাড়িতে বসে থেকে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়ার কোনো ক্ষমতা তখন তার ছিল না। রাজনৈতিক দল হিসেবে সেই আক্রমণ প্রতিরোধের কোনো লাইনই আওয়ামী লীগের ছিল না। তারা শেখ মুজিবকে ধরে নিয়ে পাকিস্তানে চালান দিয়েছিল। দেশের লাখ লাখ মানুষ জীবন দান থেকে নিয়ে হাজার রকম নির্যাতনের শিকার হতে থাকার সময় তার নিরাপদ জীবনের দায়িত্ব নিয়েছিল পাকিস্তান সরকার। শুধু তাই নয়, ঢাকায় তার স্ত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীসহ পুত্র-কন্যাদের ভরণপোষণ ও নিরাপত্তার দায়িত্বও নিয়েছিল ইয়াহিয়ার সামরিক সরকার। অন্যদিকে ২৫ মার্চের পর স্বাধীনতার আওয়াজ তুলে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতানেত্রীরা দেশের জনগণকে পাকিস্তানিদের বর্বরোচিত আক্রমণের মুখে ফেলে দেশ ছেড়ে প্রাণভয়ে যথাসাধ্য দ্রুততার সঙ্গে ভারতে পলায়ন করেছিলেন। ওই কাপুরুষতা ও দেশের জনগণের প্রতি কলঙ্কজনক আচরণের জন্য তাদের যে ব্যাখ্যা থাকা দরকার ছিল, সে ব্যাখ্যা তারা আজ পর্যন্ত কোনোদিন দেয়নি। দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে লড়াই না করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব নিজেরা ভারতে নিরাপদ অবস্থানে থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন করার দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন ভারতীয় সরকারের কাছে! ভারত সরকার দক্ষতার সঙ্গে সে দায়িত্ব পালন করেছিল!! এই যাদের অবস্থা ছিল, তারা ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে দেশ স্বাধীন করতে চেয়েছিল, তার পরিকল্পনা করেছিল ও তার জন্য ডাক দিয়েছিল—এর থেকে হাস্যকর কথা আর কী হতে পারে? কিন্তু যা হাস্যকর তারই পতাকা আজ বাংলাদেশে উড়ছে। অন্যদিকে দেশের হাজার হাজার তরুণ ও যুবক দেশ স্বাধীন করার জন্য এগিয়ে এসেছিল। তারা আওয়ামী লীগের বা তার কোনো অঙ্গ সংগঠনের সদস্য ছিল না। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েই তারা বাংলাদেশের ভেতরে এবং ভারত থেকে বাংলাদেশের মধ্যে এসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করেছিল। অগণিত সংখ্যক এই যোদ্ধা অকাতরে নিজেদের জীবন দিয়েছিলেন। কিন্তু যারা এভাবে জীবন দিয়েছিলেন তারা কোনো স্বীকৃতি পাননি, তাদের পরিবার এবং যারা এই যুদ্ধে নানাভাবে শরিক ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন তারা ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বরের পর কিছুই পাননি। যারা কলকাতায় বসে ছিল এবং যারা দেরাদুনে ভারতীয় জেনারেল ওভান্দের তদারকিতে ভারতীয় এজেন্ট হিসেবে ট্রেনিং লাভ করেছিল তারাই দেশে ফিরে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেদের ঢেঁড়ি পিটিয়ে মাখন-রুটির ব্যবস্থা করেছিল। লুটপাট করে দেশকে ছারখার করেছিল। শেখ মুজিব পাকিস্তানিদের হেফাজত থেকে ঢাকায় এসে স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হয়েছিলেন। কিন্তু এমনভাবে তারা স্বাধীন বাংলাদেশে নিজেদের শাসন পরিচালনা করেছিলেন যাতে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় প্রায় সমস্ত পরিবারসহ শেখ মুজিব নিজে নিষ্ঠুরভাবে নিহত হয়েছিলেন এবং আওয়ামী লীগ সরকারই শুধু নয়, সংগঠনও এমনভাবে বিলুপ্ত হয়েছিল যাতে মুজিব হত্যা ও নিজেদের সরকার উত্খাতের বিরুদ্ধে সামান্যতম কোনো প্রতিবাদ ও প্রতিরোধই তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। চরম প্রতিক্রিয়াশীল একটি সামরিক চক্র মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র সহযোগিতায় শেখ মুজিব এবং আওয়ামী লীগকে এভাবে হত্যা ও নিশ্চিহ্ন করলেও এর মূল দায়িত্ব সেই সামরিক চক্রের ঘাড়ে চড়িয়ে দেয়া একেবারেই সঠিক হচ্ছে না। সেটা কোনো যোগ্য ঐতিহাসিকেরই কাজ নয়। এজন্য আওয়ামী লীগকে নিজের দায় অবশ্যই স্বীকার করতে হবে।
কিন্তু সে দায় স্বীকার করার মতো নৈতিক ও রাজনৈতিক সততা তাদের না থাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসকে তারা ১৯৭২ সাল থেকেই বিকৃত করতে থাকে। ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে তাদের এই ভূমিকার জন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতকরণের যত রকম চেষ্টা হয়েছে, তার পথিকৃতের গৌরব আওয়ামী লীগেরই প্রাপ্য।
বাংলাদেশে আজ সমগ্র জনগণ ও সেই সঙ্গে সংবাদপত্র ও বৈদ্যুতিক সংবাদ মাধ্যমের ওপর যেভাবে সরকারি আক্রমণ চলছে, একে এর ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিতে উপস্থিত করার উদ্দেশ্যে ওপরের এত সব কথা বলার প্রয়োজন হলো। শুধু আওয়ামী লীগই এসব করছে, তার জন্যই এর প্রয়োজন নয়। আওয়ামী লীগ ছাড়া ১৯৭৫ সালের পর প্রত্যেকটি সরকারই পরিস্থিতি অনুযায়ী একই কাজ করেছে। এ বিষয়টি ভুলে গিয়ে শুধু আওয়ামী লীগের সমালোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে তার কোনো গণতান্ত্রিক তাত্পর্য থাকবে না। কিন্তু এ সত্ত্বেও যা বলা দরকার তা হলো, ১৯৭২-৭৫ সালের আওয়ামী বাকশালী শাসন আমলে জনগণের ওপর নির্যাতনের যে ঐতিহ্য শুরু হয়েছিল, সেই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেই অন্যান্য সরকার অভিন্ন শাসক শ্রেণীর পক্ষে একইভাবে একই কাজ করেছে। কাজেই সংবাদপত্র এবং বৈদ্যুতিক সংবাদ মাধ্যমের ওপর আক্রমণ শুধু আওয়ামী লীগেরই কাজ নয়। বিএনপি, জাতীয় পার্টি কেউই এদিক দিয়ে নিজেদের সরকারের আমলে হাত গুটিয়ে বসে ছিল না।
দুই বছর আগে দৈনিক আমার দেশ-এর ওপর বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আক্রমণ প্রসঙ্গে ফিরে এসে বলা দরকার যে, এই পত্রিকাটি সরকারবিরোধী রিপোর্ট ও নানা তথ্য প্রকাশ করার জন্য যেভাবে পুলিশ তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, এখন সে আক্রমণ আরও ব্যাপক আকারে দেশজুড়ে চলছে। এমনকি যে রিপোর্ট ও তথ্য প্রকাশিত হয়নি কিন্তু প্রকাশের মুখে ছিল, তা বন্ধ করার জন্য সাংবাদিক হত্যাও এখন শুরু হয়েছে! সেই হত্যাকাণ্ডের কোনো প্রকৃত তদন্ত যে আজ পর্যন্ত হচ্ছে না, এর কারণ বোঝার অসুবিধা কোনো সত্ লোকের আছে?
বাংলাদেশে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ এখন প্রায় প্রতিদিন এমনভাবে হচ্ছে যাতে একে এক নিয়মিত ব্যাপার হিসেবে গণ্য করা চলে। মারপিট, অপহরণ, গুম-খুন সবকিছুই যেমন সাধারণ রাজনৈতিক বিরোধীদের ক্ষেত্রে হচ্ছে, তেমনি তা হচ্ছে সাংবাদিকদের ক্ষেত্রেও। অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, এই আক্রমণ শুধু সরকারবিরোধী সাংবাদিকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। নানা ধরনের বিক্ষোভ সমাবেশের সংবাদ সংগ্রহের জন্য সরকার সমর্থক পত্রিকার সাংবাদিকরাও পুলিশের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন।
দৈনিক আমার দেশ সরকারের আক্রমণের বিশেষ লক্ষ্যস্থল এ কারণে যে, এই পত্রিকাটি যথেষ্ট তথ্য সহকারে সরকারের নানা দুষ্কৃতির সংবাদ জনগণকে সরবরাহ করে থাকে। এই পত্রিকাটির বিক্রি এবং প্রচারও যথেষ্ট। কাজেই এর বিরুদ্ধে শুধু পুলিশি আক্রমণ নয়, পরোক্ষভাবে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে একে আর্থিকভাবে পঙ্গু করার ব্যবস্থাও সরকার করেছে। এই পরিস্থিতিতে শুধু সরকারি বিজ্ঞাপনই নয়, বেসরকারি বিজ্ঞাপন থেকেও এরা বঞ্চিত হচ্ছেন। কারণ সরকারের এই বিজ্ঞাপননীতি লঙ্ঘন করে বিজ্ঞাপন দিলে বিজ্ঞাপনদাতারা সরকারি রোষ এবং হয়রানির শিকার হওয়ার ভয় করেন। ভয় করারই কথা। সবশেষে এখানে বলা দরকার যে শুধু আমার দেশ পত্রিকাটিই নয়, দেশজুড়ে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এখন যে সরকারি আক্রমণ প্রায় প্রতিদিন নিয়মিতভাবে চলছে, তার বিরুদ্ধে জোরদার সংগ্রাম সাংবাদিকরা করছেন না। তারা যেভাবে সংগ্রাম করছেন সেটা দাঁড়াচ্ছে সংগ্রাম সংগ্রাম খেলার মতো। এজন্য তারা মানববন্ধন, অনশন, ঘরোয়া সভা, দলবাজি ইত্যাদি করলেও এখনও পর্যন্ত তাদের ঢাকা এবং অন্যত্র কোনো বড় সমাবেশ ও মিছিল করতে দেখা যায়নি। মিছিল ছাড়া কোনো আন্দোলন শক্তিশালী হওয়ার নয়। মিছিল হলো রাস্তার লড়াইয়ের এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ। অন্যদের কর্মসূচির তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা মার খাচ্ছেন। কিন্তু নিজেদের কর্মসূচি নিয়ে রাস্তায় নেমে যখন তারা পুলিশের মার খাবেন, তখনই বোঝা যাবে যে সংবাদপত্র কর্মীরা নিজেদের বিরুদ্ধে আক্রমণ প্রতিরোধ ও নিজেদের পেশাগত স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রাম সঠিক পথে ও যথাযথভাবে শুরু করেছেন।
৩০-০৫-২০১২

সোমবার, ২৮ মে, ২০১২

সিরিয়ায় ন্যাটো সাম্রাজ্যবাদীদের চক্রান্ত এগিয়ে চলেছে


বদরুদ্দীন উমর
সিরিয়ায় লিবিয়ার মতো তেল নেই। কিন্তু স্ট্র্যাটেজিক দিক দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়ার গুরুত্ব অনেক। ইসরায়েল সিরিয়ার ঘোরতর শত্রু। কাজেই সিরিয়ার বর্তমান সরকার উচ্ছেদ ইসরায়েলের হাত শক্ত করার জন্য প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, লেবাননের সঙ্গে সিরিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। সিরিয়ার বর্তমান সরকার ফেলে দিতে পারলে এরপর তারা সহজেই লেবাননের ওপর সামরিকভাবে চড়াও হতে পারে। তা ছাড়া ইরান তো অবশ্যই আছে। সিরিয়ার সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ। সিরিয়ার সরকার উৎখাত হলে ইরান খুব ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্বল হবে। এসব দিক দিয়ে সিরিয়ার বাশার আল আসাদের সরকার উৎখাত মধ্যপ্রাচ্যে সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থ নিরাপদ করার জন্য প্রয়োজনীয়

ইউরো-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের এবং সৌদি আরব ও কাতারের যৌথ উদ্যোগে গঠিত সরকারবিরোধী সন্ত্রাসীদের দ্বারা মধ্য সিরিয়ার হুলা শহরে ২৫ মে ৯০ জন নিহত হয়েছে, যার এক-তৃতীয়াংশই হলো শিশু। এ চক্রান্তমূলক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে তার দায়দায়িত্ব বাশার আল আসাদের সরকারের ওপর চাপিয়ে তাদের দ্বারা গঠিত তথাকথিত সিরিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিলের নেতারা এখন জাতিসংঘের সামরিক হামলার মাধ্যমে সিরিয়ার সরকার উচ্ছেদের আওয়াজ তুলেছে। এ হত্যাকাণ্ডকে সিএনএন, বিবিসি এবং কাতারের আল জাজিরা টেলিভিশন এবং সাম্রাজ্যবাদ নিয়ন্ত্রিত পত্রপত্রিকা সিরিয়া সরকারের ক্রাইম হিসেবে অভিহিত করে প্রচার চালাচ্ছে। তারা অনেক লাশের ছবি টেলিভিশনে দেখাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তারা লিবিয়ায় একই কায়দায় যে কাজ করেছিল সিরিয়ায়ও তাই করছে। ইয়েমেনি সরকারের গুলিতে নিহত লোকদের ছবি টেলিভিশনে দেখিয়ে সেটা গাদ্দাফির সেনাবাহিনীর কাজ বলে তারা প্রচার করেছিল। এ ধরনের ধাপ্পাবাজি করতে তারা অভ্যস্ত এবং এর যথেষ্ট অভিজ্ঞতাও তাদের আছে। শুক্রবারের হত্যাকাণ্ড সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর কাজ বলে তারা প্রচার করলেও সিরিয়া সরকার এর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, এর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা সরকারবিরোধীদের কাজ। (উধরষু ঝঃধৎ ২৮.৫.২০১২) নিজেরা এ কাজ করে সরকারকে হেয়প্রতিপন্ন করা এবং এর ছুতো করে তারা জাতিসংঘকে সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে চাপ দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এটা করেছে।
সিরিয়ার সরকারি বাহিনী বসে নেই। তারা অবশ্যই বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজন অনুযায়ী আক্রমণ করছে। তাতে বেসামরিক নিরীহ লোকজনও মারা যাচ্ছে; কিন্তু এটা অবশ্যই লক্ষ্য করতে হবে যে, সিরিয়ার সরকারি বাহিনীকে এ কাজে একভাবে বাধ্য করা হচ্ছে। কারণ সাম্রাজ্যবাদের সাহায্যপুষ্ট ও তাদের দ্বারা প্ররোচিত সশস্ত্র বাহিনী সরকারি বাহিনী, বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা এবং সরকার সমর্থক জনগণের ওপরও সশস্ত্র আক্রমণ পরিচালনা করছে। এর ফলে বেসামরিক লোকজনের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর বহু লোকও হতাহত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে কোনো সরকারই যে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না, তা বলাই বাহুল্য।
লিবিয়াতেও ফ্রান্স, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র এভাবেই বেনগাজিতে এক সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলেছিল তাদের অর্থ, অস্ত্র ও রাজনৈতিক সহায়তা দিয়ে। সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সহায়তার অর্থ ছিল মুয়াম্মার গাদ্দাফির বিরুদ্ধে এক ব্যাপক রাজনৈতিক প্রচারণা চালানো। সে কাজে তারা পরিপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছিল, কারণ বিশ্বজোড়া বৈদ্যুতিন ও মুদ্রিত প্রচারমাধ্যমই তাদের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু এসব সত্ত্বেও সেই ভাড়াটে বিদ্রোহী বাহিনীকে দিয়ে গাদ্দাফিকে পরাস্ত করার ক্ষমতা তাদের ছিল না। এটা উপলব্ধি করেই তারা লিবিয়ায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে ঘড় ভষু তড়হব দাবি করে নিরাপত্তা পরিষদে। প্রস্তাবের সীমা সম্পূর্ণ লঙ্ঘন করে তারা লিবিয়ায় ন্যাটো বাহিনীকে দিয়ে বোমাবর্ষণ করিয়েছিল। এর মাধ্যমে তারা গাদ্দাফির বিশাল বাহিনী তো ধ্বংস করেছিলই, তার ওপর তাদের স্থলবাহিনীকে প্রায় নির্মূল করেছিল।
কিন্তু তাদের এ আক্রমণের সব থেকে অপরাধমূলক দিক ছিল হাজার হাজার নিরীহ বেসামরিক লোকজনের ওপর বোমাবর্ষণ করে তাদের হত্যা করা। গাদ্দাফির বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের যে অভিযোগ তারা করেছিল তার বহুগুণ হত্যা ন্যাটোর বিমান আক্রমণের মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদীরা করেছিল; কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের প্রচারমাধ্যমের শক্তি এত বেশি যে তারা সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে শেষ পর্যন্ত গাদ্দাফিকে হত্যা এবং লিবিয়ায় তার শাসন উচ্ছেদ করে, লিবিয়াকে এমন আইনের পদানত করে, তাদের তেলসম্পদ ব্যাপকভাবে লুণ্ঠন করছে।
এ প্রসঙ্গে অবশ্যই বলা দরকার যে, লিবিয়ার এই অবস্থা হতো না যদি রাশিয়া ও চীন নিরাপত্তা পরিষদে নো ফ্লাই জোনের বিরুদ্ধে ভেটো দিত। কিন্তু সেটা না দিয়ে তারা ন্যাটোভুক্ত সাম্রাজ্যবাদীদের সঙ্গেই হাত মিলিয়েছিল। এভাবে হাত মেলানোর ফলে শেষ পর্যন্ত তারা কিছুই পায়নি। তাদের হাতে ফ্রান্স, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র তামাক খেয়েছে। কোন বুদ্ধি ও বিবেচনার বশবর্তী হয়ে তারা এ কাজ করেছিল তা বোঝা মুশকিল। কোন অভিজ্ঞতার কথাই বা তারা চিন্তা করেছিল, সেটাও জানা নেই। কিন্তু লিবিয়ায় তাদের এ অভিজ্ঞতার পর তারা এখন সাবধান হয়ে জাতিসংঘ কর্তৃক লিবিয়ার মতো সিরিয়ায় নো ফ্লাই জোন চালু করার বিরুদ্ধে ভেটো দিয়েছে। তাদের এই ভেটো ন্যাটোভুক্ত সাম্রাজ্যবাদীদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়েছে। কাজেই এখন সরাসরি সিরিয়া আক্রমণ করতে না পেরে তারা তাদের দ্বারা সংগঠিত সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে সিরিয়ায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে নিযুক্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাদের কিছু সাফল্য এসেছে, কিন্তু এ কাজ করে সিরিয়া সরকারকে যেভাবে তারা ফেলে দেওয়ার চিন্তা করেছিল সেটা হয়নি।
সিরিয়ায় লিবিয়ার মতো তেল নেই। কিন্তু স্ট্র্যাটেজিক দিক দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়ার গুরুত্ব অনেক। ইসরায়েল সিরিয়ার ঘোরতর শত্রু। কাজেই সিরিয়ার বর্তমান সরকার উচ্ছেদ ইসরায়েলের হাত শক্ত করার জন্য প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, লেবাননের সঙ্গে সিরিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। সিরিয়ার বর্তমান সরকার ফেলে দিতে পারলে এরপর তারা সহজেই লেবাননের ওপর সামরিকভাবে চড়াও হতে পারে। তা ছাড়া ইরান তো অবশ্যই আছে। সিরিয়ার সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ। সিরিয়ার সরকার উৎখাত হলে ইরান খুব ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্বল হবে। এসব দিক দিয়ে সিরিয়ার বাশার আল আসাদের সরকার উৎখাত মধ্যপ্রাচ্যে সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থ নিরাপদ করার জন্য প্রয়োজনীয়।
আরব লীগ নামে যে সংগঠনটি আছে এটি সব সময়ই ইঙ্গ-মার্কিন-ফরাসি সাম্রাজ্যবাদীদের অনুগত হিসেবেই কাজ করেছে এবং এখনও করছে। এটাই একটা বড় কারণ, যে জন্য আরব দেশগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে সক্ষম হয়নি। শুধু তাই নয়, সৌদি আরবের মতো রাষ্ট্রটি ইসরায়েলবিরোধী অনেক কথাবার্তা বললেও যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে তারা ইসরায়েলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেই চলে। এসব দিক বিবেচনা করলে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে বেশ কঠিনই বলতে হবে। এ পরিস্থিতিতে ন্যাটোভুক্ত সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো ও তাদের পদানত আরব লীগ এখন সিরিয়ায় গণহত্যার কথা বলে ব্যাপকভাবে এসব প্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরাক ও সিরিয়ায় লাখ লাখ নিরীহ বেসামরিক লোক, নারী-শিশু-বৃদ্ধ হত্যা করলেও তার বিরুদ্ধে বিশ্বজোড়া কোনো বড় আকারের প্রতিবাদ ও বিরোধিতা দেখা যায় না। এর কারণ বর্তমান বিশ্বে জনমত খুব চাতুর্যের সঙ্গে প্রচারমাধ্যমের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। এই প্রচারমাধ্যম হলো সাম্রাজ্যবাদী দেশ ও তাদের মক্কেল দেশগুলোর পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।
২৮.৫.২০১২

শনিবার, ২৬ মে, ২০১২

আওয়ামী লীগের আকাশে কালো মেঘ


ব দ র“ দ্দী ন উ ম র
২২৯ জন সংসদ সদস্য নিয়ে আওয়ামী লীগ এখন শনির দশাপ্রাপ্ত হয়েছে। কোন দিকেই এখন তার আশা-ভরসার ক‚লকিনারা নেই। ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ইত্যাদির মতো তাদের তথাকথিত মহাজোটের শরিকদের পা-চাটা কথাবার্তা যে তাদের কোন কাজেই আসছে না ও আসবে না, এটা কাউকে বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে প্রকৃতপ¶ে উৎখাত হয়ে যাওয়া এই দলগুলোর একমাত্র ভরসা এখন আওয়ামী লীগ, যার নিজেরই এখন শুর“ হয়েছে অš—র্জলি যাত্রা। যার নিদান হাঁকা শুর“ হয়েছে দেশে-বিদেশে সর্বত্র, এমনকি তার প্রধান র¶ক সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের দ্বারা।
ভারতই এখন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সব থেকে ঘনিষ্ঠ সাম্রাজ্যবাদী পৃষ্ঠপোষক এবং পেয়ারের রাষ্ট্র। কিন্তু যে দেশের প্রভাবশালী অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় অল্প সময়ের জন্য ঢাকা সফরে এসে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সা¶াৎ করে শুধু তাকে দিলি­তে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে যাননি, তিনি বলেছেন, অনেকের ধারণা, ভারত বাংলাদেশে একটি বিশেষ দলের প্রতি বেশি প¶পাতিত্ব করে। কিন্তু সেটা ঠিক নয়। ভারত বাংলাদেশ ও তার জনগণের বন্ধু এবং বাংলাদেশের জনগণ যাকেই নির্বাচিত করবে তার সঙ্গেই ভারতের সুসম্পর্ক থাকবে। কোন বিশেষ দলের প্রতি ভারতের কোন প¶পাতিত্ব নেই!
এ কথা বলা যত সহজ, বলে পার পাওয়া তত সহজ নয়। কারণ ভারত যে আওয়ামী লীগের মুর“ব্বি এবং তাদের প্রতিই যে তাদের প¶পাতিত্ব এটা কোন গোপন ব্যাপার নয়। কিন্তু তা সত্তে¡ও কেন এখন ভারতের অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে এসে নিজেদের প¶পাতহীনতার কথা বললেন, সেটাই ভেবে দেখার বিষয়! বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাতাসে তারা নিশ্চয়ই পরিবর্তনের এমন গন্ধ পেয়েছেন, যা তাকে এ কথা বলতে প্ররোচিত করেছে। এটা শুধু প্রণব মুখার্জির ব্যক্তিগত মত মনে করার কারণ নেই। ভারত সরকারের মুখপাত্র হিসেবেই তিনি এ কথা বলেছেন। আওয়ামী লীগ এবং তাদের মহাজোটের পা-চাটাদের জন্য এটা যে সুখের বার্তাবহ নয়, তা বলাই বাহুল্য।
কিন্তু বিপদ শুধু এখানেই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন একই সময়ে ঢাকা সফরে এসে যা বলেছেন এবং তাদের পররাষ্ট্র দফতর থেকে বাংলাদেশের ওপর যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, তাতে এখানকার দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসী সরকার কর্তৃক যে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তার কঠোর সমালোচনা আছে। হিলারি ঢাকা এসে তাদের পরম প্রিয়পাত্র ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশের জনগণের কাছে তার লুপ্তপ্রায় ভাবমূর্তি চাঙ্গা করার চেষ্টা করেছেন। ইউনূসকে নিয়ে তাদের বড়ই দুঃখ। বেচারাকে তারা বাংলাদেশে গুর“ত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ভ‚মিকা পালন করার জন্য তৈরি করেছিলেন। কিন্তু ইউনূস নিজেই ২০০৭ সালে নিজের যোগ্যতার তুলনায় বেশি উৎসাহিত হয়ে তড়িঘড়ি করে দল গঠন করে ¶মতার সিংহাসনে আরোহণের জন্য যে তৎপরতা দেখিয়েছিলেন সেটা মাঠে মারা যাওয়ায় তারা ইউনূসকে নিয়ে বেশ বিপাকেই পড়েন। এখন আওয়ামী লীগের বিপর্য¯— অবস্থায় তারা আবার ইউনূসের ভাবমূর্তি চাঙ্গা করার জন্য ব্য¯— হয়েছেন। আওয়ামী লীগ নিজেদের নোংরা ¯^ার্থে ইউনূসের বির“দ্ধে যাই করার চেষ্টা কর“ক, তার বিশেষ কোন গুর“ত্ব নেই। কারণ দেশের গরিবদের কাছে, গ্রামাঞ্চলের ব্যাপক জনগণের কাছে, বাংলাদেশের সচেতন মধ্যবিত্তের কাছে ইউনূসের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি বলে কিছু নেই। কাজেই যা নেই, সেটা দিয়ে কোন রাজনৈতিক দাবা খেলার কোন সুফল সাম্রাজ্যবাদীদের ¶েত্রে হওয়ার কথা নয়।
ইউনূসের প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে এখানে যা বলা দরকার তা হল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক প্রয়োজনে হাসিল এখন আর ব্যবহারযোগ্য নেই। কেউ ব্যবহারযোগ্য না হলে সাম্রাজ্যবাদীরা বিশেষত আমেরিকানরা যে তাকে ছুড়ে ফেলে দিতে এতটুকুও দ্বিধাবোধ ও বিলম্ব করে না, এটা সাধারণ ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার ব্যাপার। কাজেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন হাসিনাকে কোনভাবে সংশোধন করতে ব্যর্থ হয়ে ও তার সরকার দুর্নীতি, সন্ত্রাস ইত্যাদির মাধ্যমে যে অরাজকতা তৈরি করেছে, সে পরিস্থিতিতে এই সরকারকে আগের মতো সমর্থন দিতে আর প্রস্তুত নয়।
গুম, খুন ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা, মিটিং-মিছিলের ওপর হামলা বন্ধ করা এবং পুলিশ, র‌্যাব, বর্ডার গার্ড ইত্যাদি সশস্ত্র বাহিনীকে বিরোধী রাজনৈতিক দমনে, বিশেষত বিএনপির ওপর হামলা চালানো বন্ধ করার কোন সম্ভাবনা না দেখে, সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির দ্র“ত ও ভয়াবহ অবনতি দেখেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশে তার সাম্রাজ্যবাদী লাইন নতুনভাবে গোছানোর জন্য তৈরি হয়েছে। ঢাকায় নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত যেভাবে এখন কথা বলছেন, এভাবে তাদের জন্য কোন রাষ্ট্রদূতকে প্রকাশ্যে কোন বিদ্যমান সরকারের এত সমালোচনা করতে আগে দেখা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে হিলারি ক্লিনটন ঢাকা সফর করে ফিরে যাওয়ার পর মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর বাংলাদেশের পরিস্থিতির ওপর তাদের যে রিপোর্ট দিয়েছে তা খুবই অর্থপূর্ণ।
এখানে মিটিং-মিছিল করতে দেয়া হচ্ছে না, সরকার বাক ¯^াধীনতা দমন করছে, এসব সমালোচনা বাংলাদেশের ¶েত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ব্যাপার। কারণ এরা তো এ দেশে জনগণের প্রকৃত বন্ধু হিসেবে এটা করছে না। কিন্তু তবু কেন তারা এখন এটা করছে, এটাই এক গুর“ত্বপূর্ণ জিজ্ঞাসা। এই জিজ্ঞাসার জবাব মিলতে পারে যদি আমরা বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে এটা বুঝি যে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়লাভের যে শুধু কোন সম্ভাবনা নেই তা নয়, এবার মনে হয় আওয়ামী লীগ দলটিও প্রায় উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। এদের শাসনে শুধু দেশের মানুষই অতিষ্ঠ হয়ে আছে তাই নয়, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ইত্যাদি সাম্রাজ্যবাদীরাও এই দলটির শাসন সহ্য করার মতো অবস্থায় আর নেই।
এ প্রসঙ্গে আজ ২৬ মে লন্ডনের সাপ্তাহিক ইকোনমিস্টের দুটি প্রবন্ধ খুব উলে­খযোগ্য। এর একটির নাম ‘বাংলাদেশের বিষাক্ত রাজনীতি : হ্যালো বাংলাদেশ’। দ্বিতীয়টির নাম ‘বাংলাদেশের রাজনীতি : উচ্চকণ্ঠ, চিৎকার’। প্রথম প্রবন্ধটির সাব-হেডিং আবার হল, ‘হাসিনা কর্তৃক বাংলাদেশকে ধ্বংস করা থেকে বিরত রাখার দায়িত্ব এখন ভারতের’। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতি এবং দ্ব›দ্ব-সংঘর্ষ বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের জীবনকে আরও বড় সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, এ কথা বলে দুটি প্রবন্ধেই বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে অপহরণ, গুম, খুন, দুর্নীতি, লুটতরাজ ইত্যাদি বিষয়ে বলা হয়েছে। এই সঙ্গে বলা হয়েছে যে, ২০০১-২০০৬ পর্যš— বিএনপির শাসন ছিল বর্বরোচিত। দুর্নীতি, ঠগবাজি, সন্ত্রাস ইত্যাদি ¶েত্রে তাদেরও কীর্তিকলাপ আছে। কিন্তু বিএনপি সম্পর্কে এসব কথা বললেও ইকনোমিস্টের এ প্রবন্ধ দুটি আওয়ামী লীগের কার্যকলাপের সমালোচনাতেই মুখর। জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি, রাজনৈতিক নির্যাতন, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ইত্যাদি সম্পর্কে বলতে গিয়ে সভা-সমিতি, মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও হামলা, বিরোধীদলীয় রাজনীতিকদের বির“দ্ধে মামলা ও তাদের জেলে পাঠানো, ইলিয়াস আলী অপহরণ ও সম্ভাব্য হত্যা, শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের অপহরণ ও হত্যা, সাংবাদিক দম্পতিকে হত্যা এবং তার সঙ্গে সর্বোপরি উচ্চ মহলের দুর্নীতির সম্পর্ক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিতের দুর্নীতি এবং সে দুর্নীতির প্রহসনমূলক বিভাগীয় তদš— ইত্যাদি বিষয় এ প্রবন্ধ দুটিতে বেশ ফলাও করে বলা হয়েছে।
প্রথম প্রবন্ধটিতে ভারতকে হাসিনার অভিভাবক বা মালিক হিসেবে ধরে নিয়ে যেভাবে ভারতকে চেষ্টা করতে বলা হয়েছে হাসিনাকে সংযত করতে, এটা থেকে বোঝা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের থেকে ভারতের সঙ্গেই হাসিনার সম্পর্ক অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ বলে মনে করে। এটা হতেই পারে। কারণ ১৯৭৫ সালের পর হাসিনা বেশ কয়েক বছর ভারত কর্তৃক প্রতিপালিত হয়েছিলেন এবং সেখানকার বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে তার যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। কিন্তু ভারতও যে মার্কিন সরকার কথিত ভ‚মিকা হাসিনাকে নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে পালন করতে পারছে না, এটা প্রণব মুখার্জির ঢাকা সফরকালীন কথাবার্তা থেকে স্পষ্ট। কাজেই কার্যত দেখা যাচ্ছে, একদিকে নিজের দলীয় লোকজন ও তাদের ঘরানার কিছু বুদ্ধিজীবী এবং মহাজোটের কিছু চাটুকার নেতা পরিবৃত শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের থেকে এখন প্রায় সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন। ভোটের বাজারে তার ভয়ানক দরপতন ইতিমধ্যেই হয়েছে। ভবিষ্যতে এ অবস্থা আরও খারাপ হয়ে এমন দাঁড়াবে যে, আগামী নির্বাচনে ১৫-২০টির বেশি আসন লাভ করাও কষ্টকর হবে। অন্যদিকে নিজেদের সাম্রাজ্যবাদী মুরব্বি ও পৃষ্ঠপোষকরাও এখন তাদের থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে হাসিনার ব্যর্থ নেতৃত্বের অধীন আওয়ামী লীগ দল ও আওয়ামী লীগ সরকার এখন উচ্ছন্নে যাওয়ার পথে। ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগের আকাশকে যে ঘোর কালো মেঘ আচ্ছন্ন করেছে, সে মেঘ অদূর ভবিষ্যতেই এক প্রলয়ংকর তুফান তুলে বাংলাদেশের মাটি থেকে তাদের উড়িয়ে দেবে।
২৬-০৫-২০১২

সোমবার, ২১ মে, ২০১২

ধানের মূল্য ও শ্রমজীবীর মজুরির একই অবস্থা


 বদরুদ্দীন উমর
এই মৌসুমে বোরো ধানের মূল্য না পেয়ে কৃষকরা কী পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন সে কথা বলতে গিয়ে এসব কথা বলার প্রয়োজন হলো। কারণ এসবই প্রাসঙ্গিক কথা। বাংলাদেশে গরিবের শ্রমের যদি কোনো মর্যাদা থাকত তাহলে কৃষকরা যেমন ফসলের ন্যায্যমূল্য পেতেন, তেমনি কারখানা শ্রমিকরা পেতেন মনুষ্যোচিত মজুরি এবং বিদেশে কার্যরত শ্রমিকদের শ্রমের মর্যাদা ও মূল্য তারা লাভ করতেন। কাজেই এসব ক্ষেত্রে যা হচ্ছে তাকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার উপায় নেই। এই অখণ্ড অর্থনীতিতে কোনো ধরনের শ্রমজীবীদেরই স্বার্থ দেখা ও সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা আজ নেই'

কৃষিপণ্য বাজারে ফড়িয়াদের উৎপাত ও লুটপাট কোনো নতুন ব্যাপার নয়। খোদ কৃষকরা, বিশেষত ভূমিহীনরা ভূমি মালিক ও মহাজনদের শোষণের শিকার। কিন্তু সর্বস্তরের কৃষকরা খুব বড় আকারে ক্ষতিগ্রস্ত হন মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী ও ফড়িয়াদের দ্বারা। সব রকম অসুবিধার মধ্য দিয়ে কৃষকরা ফসল উৎপাদন করার পর সেটা বিক্রির সময় পড়েন ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের খপ্পরে। এটা যদি না হতো তা হলে কৃষকদের অবস্থা এত শোচনীয় হতো না। এই মুহূর্তে বোরো ধান নিয়ে কৃষকরা এমনই এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। সরকার নিজে বোরো ধান ক্রয়ের দর নির্ধারণ করেছে মণপ্রতি ৭২০ টাকা। কিন্তু ফড়িয়াদের পাতা জালে আটকা পড়ে কৃষকরা গ্রামের বাজারে এই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন ৪২৫ থেকে ৪৪০ টাকা মণ দরে। অর্থাৎ সরকার যা নির্ধারণ করেছে তার প্রায় অর্ধেক দরে! এর ফলে হাড়ভাঙা খাটুনি ও খরচ খরচার পর লাভ তো দূরের কথা কৃষকরা এমন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন যার ধাক্কা সামলে ওঠা তাদের পক্ষে এক অসহনীয় ব্যাপার। সরকার ইচ্ছা করলেই ধানের বাজারের ওপর ফড়িয়াদের এই নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন ফসল ক্রয়ের ব্যবস্থা সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা। এটা দু'ভাবে হতে পারে। প্রথমত, সরকার কর্তৃক নিজে ফসল, এ ক্ষেত্রে ধান কেনা। দ্বিতীয়ত, সারাদেশে বিভিন্ন এলাকায় নির্দিষ্ট ধান ক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করে সরকারের তদারকিতে ক্রয়-বিক্রয় ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে ফড়িয়াদের বাজার থেকে তাড়িয়ে দিয়ে কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা।
কৃষকরা বোরো ধানের ন্যায্য দাম পাওয়া তো দূরের কথা। অনেকে এখন বাধ্য হয়ে অতি কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ধানের ন্যায্যমূল্যের জন্য আন্দোলন হচ্ছে। শুধু ফড়িয়াদের উৎপাত ও লুটপাটের বিরুদ্ধেই যে তারা আন্দোলন করছেন তাই নয়, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের পরিবর্তে তারা মণপ্রতি ৮৫০ টাকা করার দাবিও করছেন। কিন্তু এসব আন্দোলন এত বিচ্ছিন্নভাবে হচ্ছে এবং এর সাংগঠনিক শক্তি এত দুর্বল যে ফড়িয়ারা তো দূরের কথা, সরকার পর্যন্ত এদিকে দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করছে না।
ধানের ক্ষেত্রে এভাবে বাজারে ফড়িয়াদের যে তৎপরতা চলছে এটা অন্য সব অর্থকরী ফসলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কিন্তু ধান যেহেতু অন্য সব ফসলের থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং দেশের লোকের প্রধান খাদ্য, সে কারণে ধানের বাজার ফড়িয়াদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এক বিপজ্জনক ব্যাপার। বাংলাদেশ এখন খাদ্যে অর্থাৎ মূলত ধানের চাহিদা ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এ নিয়ে সরকারও অনেক ঢেঁড়ি পিটিয়ে থাকে। কিন্তু সরকার যতই ঢেঁড়ি পেটাক, এর কৃতিত্ব হচ্ছে কৃষকের, যারা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে ফসল উৎপাদন করেন। তাদের এই খাটুনির কথা অনেক সরকারি লোকজন বললেও তাদের এই খাটুনির উপযুক্ত মূল্য দেওয়ার ব্যাপারে তাদের কোনো সুনির্দিষ্ট নীতি ও কর্মসূচি নেই। কাজেই ধান ক্রয় ক্ষেত্রে যেমন থাকে টিলেঢালা অবস্থা, তেমনি ফড়িয়া নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে থাকে তাদের পরিপূর্ণ নিষ্ক্রিয়তা।
বাংলাদেশে এখন দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীরা সব ক্ষেত্রেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা নানা ধরনের সিন্ডিকেট গড়ে তুলে খাদ্যবাজার সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। এই নিয়ন্ত্রণ এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যাতে প্রতিদিনই সব রকম খাদ্যবস্তুর মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেহেতু এ ক্ষেত্রে কোনো সরকারি হস্তক্ষেপ নেই, সে কারণে বাংলাদেশ এখন পরিণত হয়েছে বিক্রেতাদের বাজারে (ঝবষষবৎং সধৎশবঃ)। এখানে ক্রেতাদের দরদস্তুর করারও কোনো সুযোগ নেই। বিক্রেতাদের হাতে তারা জিম্মি।
বলাই বাহুল্য যে, এসব সিন্ডিকেটওয়ালা হলো সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। শুধু তাই নয়, শীর্ষস্থানীয় সরকারি লোকেরা অনেকে বেনামিতে এই কারবারের সঙ্গে জড়িত। মাছ, গোস্ত, সবজি, ডাল, মসলা সব রকম খাদ্যসামগ্রী এভাবে অসৎ ও দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী এবং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। এর ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ স্থাপনের কোনো ব্যাপার নেই। সরকারি মহলে এ রকম কোনো চিন্তাভাবনার কথাও শোনা যায় না। কাজেই সারাদেশে যেখানে যা উৎপাদিত হচ্ছে তার ওপর উৎপাদকের নয়, ফড়িয়া ব্যবসায়ী এবং অসৎ রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ন্ত্রণই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্থাপিত হয়েছে।
এখন মাঠে বোরো ধান উঠেছে এবং বিক্রির জন্য কৃষকরা তা বাজারে নিচ্ছেন। কিন্তু তারা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে সর্বনাশের দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন। এর ওপর সংবাদপত্রেও কিছু কিছু রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু একদিকে সরকারের সচেতন উদাসীনতা এবং অন্যদিকে দেশে কোনো শক্তিশালী কৃষক আন্দোলন না থাকায় কৃষকরা নিদারুণ পরিশ্রম সত্ত্বেও কোনো ফসলেরই ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না।
বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষক শ্রমিকরাই সচল রেখেছেন। কিন্তু এই শ্রমজীবীদের স্বার্থই আজ সব থেকে বেশি উপেক্ষিত। কৃষকরা কৃষিক্ষেত্রে বীজ, সার, সেচ, কীটনাশক ইত্যাদি উৎপাদন সামগ্রীর অভাবে অথবা বেশি দাম দিতে বাধ্য হয়ে এবং হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে তাদের ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। এমনকি জমিতে নিজেরা যে পরিশ্রম করছেন তার বিশেষ কোনো মূল্যও তারা পাচ্ছেন না। কিন্তু তারা যা উৎপাদন করছেন তার থেকে বিরাট আকারে উদ্বৃত্ত অপহরণ করে ভূমি মালিক, মহাজন, ফড়িয়া ব্যবসায়ী, লুটপাটকারী সরকারি লোকজন নিজেদের পকেট ভর্তি করছে।
শিল্প শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও শোষণ-লুণ্ঠন একইভাবে চলছে। বাংলাদেশে শ্রমিকের মজুরি বিশ্বের অন্যান্য দেশের শ্রমিক মজুরি থেকে কম। এই সস্তা শ্রমশক্তির কারণে আন্তর্জাতিক পুঁজি বাংলাদেশের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এখানে গার্মেন্ট শিল্পের রমরমা অবস্থার এটাই মূল কারণ। কিন্তু শুধু দেশে নিযুক্ত শ্রমিকরাই নন, বিদেশে কর্মরত লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন। তারা বাংলাদেশে বছরে ১২ বিলিয়ন বা ১২শ' কোটি ডলার পাঠিয়ে থাকেন। এই বৈদেশিক মুদ্রা যদি বাংলাদেশ না পেত তাহলে এখানকার অর্থনীতি অচল হতো। এ কথা সরকারি মহলে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত হলেও এই গরিব শ্রমিকরা বিদেশে যেভাবে স্থানীয় সরকার ও মালিকদের দ্বারা নিগৃহীত হন সে ব্যাপারে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো এবং বাংলাদেশ সরকার কোনো দৃষ্টি দেয় না। না দেওয়ারই কথা। কারণ, কৃষক শ্রমিকের ঘাম ও রক্তের কোনো মূল্য বাংলাদেশের শাসকশ্রেণী ও তাদের কোনো সরকারের কাছে নেই।
এই মৌসুমে বোরো ধানের মূল্য না পেয়ে কৃষকরা কী পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে সে কথা বলতে গিয়ে এসব কথা বলার প্রয়োজন হলো। কারণ এসবই প্রাসঙ্গিক কথা। বাংলাদেশে গরিবের শ্রমের যদি কোনো মর্যাদা থাকত তাহলে কৃষকরা যেমন ফসলের ন্যায্যমূল্য পেতেন, তেমনি কারখানা শ্রমিকরা পেতেন মনুষ্যোচিত মজুরি এবং বিদেশে কার্যরত শ্রমিকদের শ্রমের মর্যাদা ও মূল্য তারা লাভ করতেন। কাজেই এসব ক্ষেত্রে যা হচ্ছে তাকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার উপায় নেই। এই অখণ্ড অর্থনীতিতে কোনো ধরনের শ্রমজীবীদেরই স্বার্থ দেখা ও সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা আজ নেই।
২১.৫.২০১২

রবিবার, ২০ মে, ২০১২

ভারতে আন্না হাজাররে অনশন ও র্দুনীতি সমাচার




বদরুদ্দীন উমর
   
রাজনতৈকি প্রতবিাদ ও দাবি আদায়রে পদ্ধতি হসিবেে ভারতে অনশনরে প্রচলন করনে কংগ্রসে নতো গান্ধী। সইে থকেে অনশনকে আন্দোলনরে হাতয়িার হসিবেে অনকেইে অনকে সময় ব্যবহার করে আসছনে। গান্ধীবাদী সমাজর্কমী আন্না হাজারে ভারত থকেে র্দুনীতি নর্মিূল করার উদ্দশ্যেে সরকারকে লোকপাল বলি পাস করতে বাধ্য করার জন্য আমরণ অনশন করনে। 


র্বতমান বশ্বিে র্সবপ্রধান র্দুনীতগ্রিস্ত দশেগুলোর অন্যতম হচ্ছে ভারত। বশ্বিরে এই 'বৃহত্তম গণতান্ত্রকি' দশেে গণতান্ত্রকি ব্যবস্থার প্রকৃত চরত্রি এর মধ্যে প্রতফিলতি হয়থ এ কথা বললে সত্যরে কোনো অপলাপ হয় না। ভারত একটি বৃহৎ দশেও বট।ে বভিন্নি সূত্র থকেে জানা যায়, সুইজারল্যান্ডরে ব্যাংকগুলোতে ভারতীয় নাগরকিদরে লাখ লাখ কোটি র্দুনীতলিব্ধ ডলার জমা আছ।ে এদকি দয়িে বশ্বিে ভারতরে স্থান র্সবর্শীষ!ে রাজনীতবিদি, সরকারি আমলা, ব্যবসায়ীদরে হসিাবে সখোনকার ব্যাংকগুলোতে এই র্অথ জমা হয়ছেে ভারতরে শ্রমজীবী কৃষক, শ্রমকি ও মধ্যবত্তিরে রক্ত শোষণ কর,ে তাদরে গরবি থকেে আরও গরবি বানয়ি,ে অভুক্ত-র্অধভুক্ত রখে,ে ভটিমোটি থকেে উচ্ছদে কর,ে তাদরে পকটে মরে।ে রাতারাতি এটা হয়ন।ি র্দীঘদনি ধরে র্দুনীতরি এই প্রক্রয়িা জারি থকেে এখন তা দশেটরি র্সবস্তর,ে বশিষেত শাসকশ্রণেীর র্সবস্তরে ছড়য়িে পড়ে যে পরস্থিতিরি সৃষ্টি করছেে তারই একটা প্রতফিলন অন্য অনকে কছিুসহ আন্না হাজাররে অনশনরে মধ্যওে দখো গলে। অনশন করে ভারতরে মতো এক বরিাট দশেে বা অন্য কোনো দশেে র্দুনীতি নর্মিূল করা বা কময়িে আনা যায়, এটা এক অবাস্তব চন্তিা। যে চন্তিা অবাস্তব তার থকেে প্রসূত র্কমসূচওি যে অবাস্তব ও পরণিামে অর্কাযকর হবে এতে সন্দহে নইে। কন্তিু আন্না হাজাররে এই অনশন ভারতে র্দুনীতি নর্মিূল করা বা কময়িে আনার ক্ষত্রেে কছিু করতে না পারলওে এ র্দুনীতি বষিয়টকিে সামনে আনার ব্যাপারে একটা ভূমকিা পালন করছে।ে এর মাধ্যমে বশ্বিরে র্সববৃহৎ গণতন্ত্র হসিবেে ভারতরে শাসন ব্যবস্থার শোষণমূলক এবং অগণতান্ত্রকি চরত্রিও অনকেখানি উন্মোচতি হয়ছে।ে বারো দনি অনশনরে পর ভারত সরকার ও তাদরে র্পালামন্টে আন্না হাজাররে দওেয়া তনিটি র্শত মনেে নওেয়ার পর তনিি আজ ২৮ আগস্ট সকালে তার অনশন ভঙ্গ করছেনে। অনশন কোনো বপ্লিবী র্কমসূচি তো নয়ই, এর দ্বারা খুব জোর কছিু সংস্কারমূলক দাবি আদায় হতে পার।ে এটা গান্ধীর অনশনরে সময়ওে দখো গছে।ে কন্তিু তা সত্ত্বওে আন্দোলনরে পদ্ধতি হসিবেে অনশনরে একটা ভূমকিা ব্রটিশি আমলে দখো দয়িছেলি। ১৯৪৭ সালরে ১৫ আগস্টরে পর জওয়াহরেলাল নহেরুর কংগ্রসে সরকার পাকস্তিানকে দয়ে নর্ধিারতি র্অথ দতিে অস্বীকার কর।ে এর প্রতবিাদে ও ভারত সরকার র্কতৃক দশে ভাগরে সময় গৃহীত সদ্ধিান্ত অনুযায়ী পাকস্তিানকে দয়ে টাকা পরশিোধ করতে বাধ্য করার উদ্দশ্যেে গান্ধী অনশন করনে এবং নহেরু সরকার পাকস্তিানকে তাদরে প্রাপ্য র্অথ প্রদান করার পর তনিি তার অনশন ভঙ্গ করনে। 


দক্ষণি আফ্রকিা থকেে ভারতে আসার পর ১৯১৪ সালে তনিি প্রথম অনশন করনে। ১৯৪৭ সালরে এ অনশনই ছলি তার জীবনরে শষে অনশন। 
গান্ধী ও তার অনুসারীরা যে অনশন করতনে এবং এখন আন্না হাজাররে মতো গান্ধীবাদী যে অনশন করছেনে তার মধ্যে কোনো ফাঁকি থাকনে।ি এই অনশনরে সময় কউে কউে নরিম্বু (পানি না খয়ে)ে উপবাস করনে। কন্তিু অধকিাংশ ক্ষত্রেইে শরীররে শুষ্কতা (ফবযুফবঃরড়হ) যাতে না ঘটে এ জন্য তারা পানি খয়েে থাকনে। গান্ধী জীবনে অনকেবার অনশন করছেনে এবং কখনও সপ্তাহরে পর সপ্তাহ। এখন আন্না হাজারে বারো দনি অনশনরে পর তা ভঙ্গ করছেনে। কাজইে এই অনশনরে র্কাযকারতিা অল্পবস্তির যাই থাকুক, এটা সহজ কাজ নয় এবং এতে জীবনরে প্রতি ঝুঁকি থাকে অনকে বশে।ি 


বাংলাদশেে এখন খুব ঘন ঘন অনশন হয়। কত রকম ইস্যু নয়িে যে অনশন হয় তারও কোনো ঠকি নইে। কন্তিু দখো যায়, এসব অনশনে কোনো সময়ইে রাত পোহায় না। আগে থকেইে ঘোষণা দওেয়া হয়, সকাল ৮টা বা ১০টা থকেে বকিলে ৪টা বা ৬টা বা ওই ধরনরে ছয় ঘণ্টা, আট ঘণ্টা অনশনরে! র্অথাৎ সকালে বশে ভালো করে খাওয়া-দাওয়া করে প্রসে ক্লাবরে সামন,ে জাতীয় জাদুঘররে সামন,ে পুরানা পল্টন,ে মুক্তাঙ্গনে অথবা ওই রকম কোনো জুতসই জায়গায় শতরঞ্জি বছিয়ি,ে শাময়িানা টাঙয়িে এসব অনশন হয়! র্অথাৎ রমজানরে সময় ভোর রাতে খয়েে পরদনি সন্ধ্যা র্পযন্ত রোজাদাররা এক মাস ধরে যভোবে দনিে উপোস থাকনে সে রকম কছিুও এই তথাকথতি অনশনগুলোতে দখো যায় না! অনশনকারীরা দব্যিি খাওয়া-দাওয়া করে মজলসিে বসে আড্ডা দয়িে অনশন পালন করনে! ফলে দখো যায়, গান্ধী ও গান্ধীবাদীদরে অনশনরে যে র্কাযকারতিা ছলি বা এখনও আছ,ে যা এখন আন্না হাজাররে বারো দনিরে অনশনরে মাধ্যমে নতুন করে দখো গলে, তার তলিমাত্র বাংলাদশেি রাজনীতবিদি ও মানবাধকিার র্কমীদরে অনশনরে মধ্যে দখো যায় না। তবে সংবাদপত্রে এর সচত্রি রপর্িোট ছাপা হয় এবং এর মাধ্যমে অনশনকারীরা একটা প্রচার লাভ করনে। কন্তিু প্রচার লাভ করলওে যে ইস্যুতে তারা অনশন করনে সে ইস্যুর কোনো সুরাহা এই ধরনরে অনশনরে মাধ্যমে হয় না। এর কারণ, যভোবে এসব অনশন পালন করা হয় তাতে সংস্কারবাদীরা যভোবে একে ব্যবহার করে এসছেনে তাকে ব্যঙ্গ করা ছাড়া আর কছিুই হয় না। এর মধ্যে কোনো শক্তি থাকে না। অনশনরে ভণ্ডামপর্িূণ ব্যবহাররে মাধ্যমে সংগ্রামরে পদ্ধতি হসিবেে একে ভোঁতা ও হাস্যকর ব্যাপারে পরণিত করা হয়। বলাই বাহুল্য, স্বাধীন বাংলাদশেরে শাসকশ্রণেী ও তাদরে সহযোগী মধ্যশ্রণেীভুক্ত লোকজন এখন যে চারত্রিকি বশৈষ্ট্যি র্অজন করছেনে, তার সঙ্গে অনশন নয়িে এ ভণ্ডামি খুবই সঙ্গতপর্িূণ। শুধু অনশনই নয়, এখন র্ধমঘট ও হরতালরে অবস্থাও একই প্রকার। র্ধমঘট ও হরতাল জনগণরে এক গুরুত্বর্পূণ রাজনতৈকি অধকিার এবং সংগ্রামরে এক র্কাযকর হাতয়িার। কন্তিু বাংলাদশেে কারণ-েঅকারণ,ে অতি তুচ্ছ থকেে নয়িে অনকে নর্বিোধ লক্ষ্য সামনে রখে,ে বভিন্নি চক্ররে র্স্বাথে যভোবে কথায় কথায় হরতাল ও র্ধমঘটরে আহ্বান জানানো হয় ও হরতাল পালতি হয়, তাতে হরতালরে বা র্ধমঘটরে আর কোনো ধার, শক্তি বা র্কাযকারতিা থাকে না। কাজইে এসব হরতালকে বুড়ো আঙুল দখেয়িে সরকার তার নানাবধি গণবরিোধী তৎপরতা অব্যাহত রাখতে অসুবধিা বোধ করে না। বাংলাদশেে র্সবক্ষত্রেে র্দুনীতি যভোবে ছয়েে গছেে এটা সকলরেই জানা। ওপরে অনশন ও হরতাল-র্ধমঘট সর্ম্পকে যা বলা হলো সটো র্দুনীতগ্রিস্ত রাজনতৈকি লোকদরে অসৎ রাজনতৈকি আচরণরে অন্যতম দৃষ্টান্ত। 


ভারতে র্দুনীতি দমনরে জন্য আন্না হাজাররে অনশনরে প্রসঙ্গে ফরিে এসে দখো যায়, এক্ষত্রেে অনশনরে একটা র্কাযকারতিা থাকলওে যে উদ্দশ্যেে অনশন করা হয়ছেে সে উদ্দশ্যে এর মাধ্যমে র্অজনরে সম্ভাবনা নইে বললইে চল।ে যে তনি র্শত পূরণরে পর আন্না তার অনশন প্রত্যাহার করছেনে সগেুলো হলো, প্রধানমন্ত্রী থকেে নয়িে নম্নিস্তররে আমলাদরে লোকপাল আইনরে আওতায় আনা, প্রত্যকে রাজ্যে স্বাধীন র্দুনীতি দমন সংস্থা 'লোকযুক্ত' গঠন এবং একটি নাগরকি সনদ গঠন। সরকার ও র্পালামন্টেরে দুই কক্ষরে সদস্যদরে মধ্যে অনকে আলোচনা ও বর্তিকরে পর অবশষেে র্সবসম্মতক্রিমে আন্নার দাবি মনেে নয়িে র্পালামন্টেে প্রস্তাব পাসরে পর আন্না র্কতৃক অনশন ভঙ্গরে ঘটনার মধ্য দয়িে একদকিে যমেন ভারতরে শাসকশ্রণেীর কৗেশলজ্ঞান ও রাজনতৈকি পরপিকস্ফতার (ঢ়ড়ষরঃরপধষ সধঃঁৎরঃু) পরচিয় পাওয়া যায়, তমেনি অন্যদকিে পরচিয় পাওয়া যায় তাদরে সুবধিাবাদ এবং অসাধুতার। কারণ এই বলি পাস করা, না করার দ্বারা ভারতে র্দুনীতি দমন যে সম্ভবত সম্ভব নয় এটা কংগ্রসে নতেৃত্বাধীন কোয়ালশিন সরকার যমেন জান,ে তমেনি জানে বজিপেি এবং তাদরে চক্ররে বভিন্নি গরেুয়া র্পাট।ি শাসকশ্রণেীর এসব অংশই প্রবলভাবে র্দুনীতগ্রিস্ত। 


এদরে মধ্যে যারাই সরকার গঠন করে তারাই নজিরো র্দুনীতি করে এবং র্দুনীতবিাজদরে বরিুদ্ধে কোনো র্কাযকর পদক্ষপে না নয়িে তাদরে রক্ষা ও লালন কর।ে কাজইে আন্না হাজাররে আন্দোলনরে পছেনে থকেে বজিপেি যতই তাতে শক্তরি জোগান দকি তারা জানে য,ে এর দ্বারা কংগ্রসে সরকারকে রাজনতৈকিভাবে বড়িম্বতি করা গলেওে র্দুনীতি দমন তো দূররে কথা, কময়িে আনাও সম্ভব নয়। 


ভারতে র্দুনীতি সরকারি ও বসেরকারি র্কমক্ষত্রে,ে সমাজরে বভিন্নি ক্ষত্রেে যভোবে ছড়য়িে পড়ছেে তাতে কোনো আইনরে দ্বারাই তা নর্মিূল, দমন বা হ্রাস করা যায় না। এর বরিুদ্ধে সমাজে যে চতেনা সৃষ্টি ও সঞ্চার করা অপরহর্িায সটো সম্ভব একমাত্র দশেব্যাপী গণতান্ত্রকি ও বপ্লিবী আন্দোলনরে মাধ্যম,ে জনগণরে শক্তকিে জাগ্রত ও সংগঠতি কর।ে কাজইে এ সমস্যা আইনরে মধ্যমে অথবা কোনো সংস্কারমূলক আন্দোলনরে মাধ্যমওে সমাধান হওয়ার নয়। কাজইে লোকপালরে আওতায় প্রধানমন্ত্রী থকেে সাধারণ র্কমচারীকে অল্প হলওে দখো যাব,ে এর দ্বারা পরস্থিতিরি কোনো উন্নতি হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, যে গণতান্ত্রকি ও বপ্লিবী আন্দোলনরে মাধ্যম জনগণরে শক্তি সংগঠতি করে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব তার বকিাশ রুদ্ধ কর,ে বাধাগ্রস্ত করে যারা নজিদেরে শাসন ক্ষমতা টকিয়িে রাখে তারাই হয় র্দুনীতরি জন্মদাতা ও র্দুনীতবিাজদরে রক্ষক। এটা এ প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার, আন্না হাজাররে লোকপাল আইন প্রয়োগরে ক্ষত্রেওে কোনো ম্যাজকি দখোতে পারে না। ভারতে এমন অজস্র আইন আছে যার ফাঁকফোকর দয়িে র্দুনীতবিাজদরে বরে হয়ে যাওয়ার সুযোগরে অভাব নইে। এ সুযোগ আগওে ব্যবহার করা হয়ছেে এবং লোকপালরে আওতায় প্রধানমন্ত্রী থকেে সাধারণ সরকারি র্কমচারীকে আনা হলওে এই সুযোগরে ব্যবহার বন্ধ হবে না। 


কাজইে আন্না হাজাররে অনশন ও আন্দোলনরে মাধ্যমে আইনরে সংস্কার করে ভারতে র্দুনীতি দমন ও নর্মিূল করা যাব,ে এমনকি উল্লখেযোগ্যভাবে হ্রাস করা যাব,ে এ চন্তিা অবাস্তব। অনকে সমস্যার মতো র্দুনীতি মোকাবলো সমস্যাও হলো এমন এক সমস্যা যার সমাধান রাজনতৈকিভাবে সম্ভব। রাজনতৈকি প্রতক্রিয়িাশীলতা ও জনগণরে সম্পদ অপহরণই যখোনে র্দুনীতরি স্রষ্টা সখোনে একমাত্র জনগণরে নজিস্ব রাজনতৈকি ক্ষমতার ব্যবহার ছাড়া র্দুনীতি দূরীকরণ সম্ভব নয়। রাজনতৈকি সমস্যার সমাধান রাজনীতরি মাধ্যমইে করতে হব।ে কাজইে আন্না হাজাররে অনশন আন্দোলন ভারতে র্দুনীতি বষিয়টকিে গুরুতর সমস্যা হসিবেে সামনে আনতে পার।ে কন্তিু এর সমাধানরে যে পথ দখোয় তা শুধু যে অর্কাযকর তাই নয়, বভ্রিান্তকিরও বট।ে 


এ প্রসঙ্গে অন্য যে কথাটি বলা দরকার তা হলো, র্দুনীতি যে ভারতরে সকল র্কমক্ষত্রেে রল্প্রব্দে রল্প্রব্দে ছয়েে আছে এ বষিয়ে জনগণকে সচতেন করার জন্য আন্দোলনরে কোনো প্রকৃত প্রয়োজন নইে। এদকি দয়িে আন্না হাজাররে আন্দোলন সমস্যাটকিে সাময়কিভাবে সামনে আনলওে এর মধ্যে র্দুনীতরি সমস্যা সমাধানরে কোনো পথ নইে। উপরন্তু এক্ষত্রেে সমাধানরে পথ সর্ম্পকে বভ্রিান্তি সৃষ্টি কর,ে এর রাজনতৈকি চরত্রি আড়াল করে আন্না হাজাররে আন্দোলন র্দুনীতি দমন ও নর্মিূলরে পরর্বিতে একে জইিয়ে রাখার র্শতগুলো টকিয়িে রাখার পক্ষইে পরোক্ষভাবে কাজ করছ।ে 
[সূত্রঃ সমকাল, ৩০/০৮/১১]

শনিবার, ১৯ মে, ২০১২

বেসরকারি প্রাথমিক শি¶কদের অনশন




ব দ র“ দ্দী ন উ ম র
রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শি¶করা ১৭ মে তাদের চার দিনের কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেছেন। এই সঙ্গে তারা ঘোষণা করেছেন তাদের পরবর্তী কর্মসূচি। আগামী ৩১ মে’র মধ্যে তাদের প্রধান দাবি বেসরকারি স্কুলগুলোর জাতীয়করণ যদি না করা হয়, তাহলে ১৬ জুন থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অর্থাৎ তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যš— তারা দেশের ২৪ হাজার স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দেবেন। এই ধর্মঘট কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন প্রায় ১ লাখ শি¶ক।
২০০৮ সালে নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল যে, তারা ¶মতায় গেলে বেসরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলো জাতীয়করণ করবে। কার্য¶েত্রে যাই হোক, প্রতিশ্র“তির ব্যাপারে আওয়ামী লীগ যে অসাধারণ উদার এটা সবারই জানা। বিগত নির্বাচনে বেসরকারি প্রাথমিক স্কুলের শি¶কদের দেয়া প্রতিশ্র“তি তারা আজ পর্যš— র¶া করেনি। শুধু তাই নয়, এ নিয়ে কোন আগ্রহই তাদের এখন নেই। উপরন্তু এই জাতীয়করণের তারা ঘোর বিরোধী। কিন্তু কার্য¶েত্রে বিরোধিতা সত্তে¡ও এ ব্যাপারে তাদের আশ্বাসের কমতি নেই। আশ্বাস দেয়ার ব্যাপারে তারা প্রতিশ্র“তি দেয়ার মতোই উদার!
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল, এমনকি প্রত্যš— অঞ্চল থেকে হাজার হাজার প্রাথমিক স্কুল শি¶ক ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান গ্রহণ করে নিজেদের দাবি জানাতে থাকলেও সরকারি কর্তৃপ¶ সেটা ভ্রƒ¶েপ করার প্রয়োজন মনে করেনি। শি¶কদের একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার দাবি জানালেও তাতে কাজ হয়নি। তবে একজন প্রতিমন্ত্রীর অফিসে তাদের সঙ্গে আলোচনার সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের সা¶াতের ‘আশ্বাস’ দেন। কিন্তু কোন সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা সে ¶েত্রে না হওয়ায় শুধু এ ধরনের আশ্বাসের ওপর আস্থা না রেখে আন্দোলনকারী শি¶করা নিজেদের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধাš— নেন। মন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের ওপর শি¶কদের আস্থা না থাকা যুক্তিসঙ্গত। কারণ এ¶েত্রে তারা ২০০৮ সালে দেয়া নির্বাচনী প্রতিশ্র“তি র¶া করেননি এবং পরে ২০১০ সালের জুলাই মাসের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের বেতন বৈষম্য দূর করার যে প্রতিশ্র“তি ঘোষণা করেছিলেন, সে অনুযায়ী কিছু কাজ হয়নি। বেসরকারি স্কুল শি¶কদের অবস্থা অপরিবর্তিত আছে।
গত ২১ থেকে ২৭ ডিসেম্বর প্রাথমিক শি¶করা এই সরকারের আমলে প্রথমবার শহীদ মিনারে অবস্থান গ্রহণ করে একই দাবিতে অনশন পর্যš— করেন। তারা গায়ে কেরোসিন দিয়ে আÍাহুতির কর্মসূচিও ঘোষণা করেন। সরকারের আশ্বাসের ভিত্তিতে তা প্রত্যাহার করা হলেও সরকার এ পর্যš— কিছুই করেনি! কাজেই তাদের দ্বিতীয় দফায় এ আন্দোলন আবার করতে হচ্ছে। এই আন্দোলন চলাকালে শি¶করা ১৫ মে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেয়ার উদ্দেশে মিছিল বের করেন। মিছিল শাহবাগের কাছে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে পৌঁছলে পুলিশের সঙ্গে শি¶কদের সংঘর্ষ হয়। মিছিলকারীদের গতি রোধ করার জন্য পুলিশ জলকামান থেকে তাদের ওপর গরম পানি ছোড়ে এবং পরে লাঠিচার্জ করে। প্রবীণ শি¶করাও মারধরের শিকার হন। পুলিশের এই হামলায় জামালপুরের এক স্কুলের প্রবীণ শি¶ক আজিজুর রহমান আহত হন এবং পরে হাসপাতালে মারা যান।
রেজিস্টার্ড বেসরকারি স্কুল জাতীয়করণের দাবি নতুন নয়। আগের কথা বাদ দিলেও ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিটি নির্বাচিত সরকারের কাছে এই শি¶করা তাদের স্কুল জাতীয়করণের এবং সরকারি ও বেসরকারি স্কুল শি¶কদের বেতন বৈষম্য দূর করার দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু কোন সরকারের আমলেই আজ পর্যš— এ দুই দাবির কোনটিরই বা¯—বায়ন হয়নি। কাজেই দ্বিতীয় দফা আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণার সময় তারা বাধ্য হয়ে আবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
প্রাথমিক স্কুলের এই শি¶করা গরিব ছাত্রদের শি¶ক। গরিবদের চিকিৎসার ¶েত্র যেমন, তাদের শি¶া¶েত্রেও তেমনি সরকারের কোন দায়িত্ব আছে বলে মনে হয় না। এই শি¶কদের বেতন এত কম যে, তাতে পরিবার-পরিজনসহ জীবনধারণ করা যে কোন লোকের প¶েই কষ্টকর। এ অবস্থায় প্রাথমিক শি¶কদের আÍহত্যার ঘটনাও বিরল নয়। সুস্থ শরীর এবং মোটামুটি দুশ্চিš—ামুক্ত না হলে যে শি¶কদের দ্বারা ছাত্রদের পাঠদান ঠিকমতো হওয়া সম্ভব নয়, এটা বলাই বাহুল্য। কিন্তু ঠিকমতো পাঠদান তো দূরের কথা, অনেক সময় শি¶করা স্কুলে উপস্থিত থাকতেও পারেন না। কারণ স্কুলবেতন থেকে তারা যা পান তার অতিরিক্ত আয় তাদের করতে হয় অন্য কাজ করে এবং সে কাজের জন্যও সময় দিতে হয়। এই পরিস্থিতিতে নিচের স্কুলগুলোতে ছাত্ররা উপযুক্ত শি¶া লাভ থেকে বঞ্চিত হয়। এই ছাত্ররা উপরের ক্লাসে উঠেও এ জন্য আর ভালো করতে পারে না। এসএসসি পরী¶ার সময় প্রত্যেক বছরই দেখা যায়, এই স্কুলগুলোর ফলাফল খুব খারাপ হয়। অনেক স্কুলে পরী¶ায় সব ছাত্রই ফেল করে! বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে বেসরকারি স্কুলগুলোর যে অবস্থা তাতে এটাই ¯^াভাবিক। এগুলোতে শুধু যে শি¶করা উপযুক্ত বেতনের অভাবে তাদের শি¶াদান অনেক ¶েত্রে ঠিকমতো করতে পারেন না তাই নয়, এই স্কুলগুলোর বাড়িঘর বলেও কিছু থাকে না। ভাঙাচোরা ঘরে ক্লাস হয়। সেখানে চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চ, ব­াকবোর্ড, বইপত্র কিছুরই ঠিক থাকে না। সরকারি মন্ত্রী থেকে নিয়ে বড় কর্তারা ‘ছাত্ররাই দেশের ভবিষ্যৎ’, ‘দেশের মের“দÊ’ ইত্যাদি অনেক বড় বড় কথা বললেও তাদের মের“দÊ সরকারের বৈষম্যমূলক নীতির কারণেই ভেঙে পড়ে। 
আগামী ৩১ মে’র মধ্যে সরকার প্রাথমিক শি¶কদের দাবি মেনে নিয়ে রেজিস্টার্ড বেসরকারি স্কুল জাতীয়করণ এবং সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের বেতন বৈষম্য দূর করবেÑ এটা ভাবার কোন বা¯—বসম্মত কারণ নেই। এ কারণে যে, এই সরকার গরিবদের ভোটে নির্বাচিত হলেও এবং ভাঁওতাবাজি করে গরিবদের অনেক রকম প্রতিশ্র“তি এবং আশ্বাস দিয়ে এলেও, এরা গরিবদের কোন প্রতিনিধি নয়। এদের শাসনের অধীনে চোর, দুর্নীতিবাজ, ডাকাত, প্রতারক এবং লুণ্ঠনজীবীরাই সম্পদের পাহাড় বানাচ্ছে। অন্যদিকে এই প্রক্রিয়ায় গরিবদের জীবন বেশি করে বিধ্ব¯— ও ধ্বংস হচ্ছে। 
এ অবস্থায় শি¶কদের আন্দোলন যেভাবে হওয়া দরকার, সেভাবে না হওয়ার কারণেই বারবার আন্দোলন সত্তে¡ও তাদের কোন সাফল্য আসে না। আন্দোলনের একপর্যায়ে তারা সরকারি আশ্বাস ইত্যাদির কারণে আন্দোলন বন্ধ করেন। কাজেই দাবি না মানা পর্যš— অনমনীয়ভাবে আন্দোলন চালিয়ে গেলে যে ফল পাওয়ার কথা সে ফল তারা পান না। 
চাকরি যাওয়া এবং অন্যান্য ভয়ের কারণে শি¶করা একটা পর্যায়ের বেশি আন্দোলন চালিয়ে যেতে অ¶ম হওয়ার কারণেই তারা ধনিক শ্রেণীর সরকারের কাছে পরাজিত হন। এ¶েত্রে শি¶ক নেতৃত্বের দুর্বলতাও ল¶ণীয়। এসব দুর্বলতা কাটিয়ে উঠে, শক্তভাবে দাঁড়িয়ে, ১৬ জুন থেকে সব সরকারি শত্র“তার মুখে দাঁড়িয়ে তারা যদি অবিচলিত ও দৃঢ়ভাবে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারেন, একমাত্র সে ¶েত্রেই তাদের আন্দোলনে সাফল্য আসতে পারে। অন্যথায় তাদের আন্দোলনের পরিণতি আগে যা হয়েছে তার থেকে ভিন্ন হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। 
১৯.০৫.১২

বুধবার, ১৬ মে, ২০১২

হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের ওপর সরকারি হামলা



ব দ রু দ্দী ন উ ম র
কারও মাথা যখন বিগড়ে যায় তখন তার শেষ অবস্থা। মনে হয় আওয়ামী লীগ এখন সেই অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। আজ ১৬ মে সংবাদপত্রে ‘দেয়াল’ নামে হুমায়ূন আহমেদের একটি উপন্যাস প্রকাশের ওপর হাইকোর্টের এক নিষেধাজ্ঞার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে রাসেলের হত্যা বিষয়ক যে কথা উপন্যাসটিতে লেখা হয়েছে সেটা ভুল। এই ভুল সংশোধন না করা পর্যন্ত উপন্যাসটি হুমায়ূন প্রকাশ করবেন না, হাইকোর্ট এটা আশা করেন। তাদের এই ‘আশা’ করার অর্থ হুকুম জারি। কারণ তাদের আশা অনুযায়ী কাজ না করলে আদালত অবমাননার দায়ে দণ্ডিত বা অন্যভাবে বেইজ্জত হতে হবে।


সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল এ বিষয়ে বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী ও জাহাঙ্গীর হোসেনের দ্বারা গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করার পর তারা এই আশা ব্যক্ত করেন (Daily Star-১৬.৫.২০১২)। একটি suo moto রুল জারি করে আদালত এ সম্পর্কিত সব প্রাথমিক দলিলপত্র অর্থাত্ ভাষ্য সংবলিত কাগজপত্র হুমায়ূন আহমেদকে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে হুমায়ূন সেগুলোর মাধ্যমে নতুন তথ্য এবং সরকারি ভাষ্য সম্পর্কে অবগত হয়ে অর্থাত্ সত্যের সঙ্গে পরিচিত হয়ে তাঁর বইটিতে বলা কথা পরিবর্তন করতে পারেন। মহামান্য আদালত কর্তৃক মিথ্যার পরিবর্তে সত্য প্রতিষ্ঠার এই প্রচেষ্টা প্রশংসাযোগ্য। কিন্তু এখানে কথা আছে। কথাটি হলো এই যে, ঐতিহাসিক ঘটনাসহ যে কোনো ঘটনার সত্যাসত্য নির্ধারণের মালিকানা কারও নেই। কোনো সরকারের তো নেই-ই। আদালতেরও নেই। ঘটনা বিশ্লেষণের কিছু নিয়মকানুন আছে এবং তার চর্চার মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তির অধিকার আছে নিজের ভাষ্য প্রকাশ করার। এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপের অধিকার কারও নেই। যাই হোক, এ ব্যাপারে পরে আসা যাবে। এখন দেখা যাক হুমায়ূনের এবং সরকারের ভাষ্যে কী বলা হয়েছে।
১১ মে দৈনিক ‘প্রথম আলো’ পত্রিকায় হুমায়ূনের ‘দেয়াল’ নামক উপন্যাসের দুটি পরিচ্ছেদ প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, শেখ মুজিবের দুই পুত্রবধূ ও ছোট ছেলে রাসেল বিছানায় জড়াজড়ি করে থেকে ভয়ে কাঁপছিলেন। যখন ঘাতকরা তাদের কামরায় ঢোকে তখন রাসেল কাপড়ের আলনার পেছনে লুকিয়ে পড়ে ও কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘আমাকে গুলি কোরো না’। ঘাতকরা তাকে সেখান থেকে বের করে হত্যা করে।


অ্যাটর্নি জেনারেল এই বর্ণনার বিরোধিতা করে আদালতকে বলেন যে, দলিলপত্র এবং শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায়ে বলা হয়েছে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিক্ষুব্ধ সামরিক অফিসারদের একটি গ্রুপ শেখ মুজিব ও তার পরিবারের ১৩ জন সদস্যকে হত্যা করে। তারা শেখ রাসেলকে শেখ মুজিবের ব্যক্তিগত সহকারী এএফএম মোহিতুল ইসলামের কাছ থেকে এই বলে ছিনিয়ে নেয় যে, তারা তাকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যাবে। সে সময় রাসেল মোহিতুল ইসলামকে জিজ্ঞেস করে, তারা তাকে মেরে ফেলবে কি-না। মোহিতুল তাকে বলেন, তারা সেটা করবে না। কিন্তু ঘাতকরা রাসেলকে নিচের তলা থেকে দোতলায় নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। (Daily Star-১৬.৫.২০১২)
প্রথমেই বলা দরকার, শেখ মুজিব হত্যার রায়ে যা-ই বলা থাক, অ্যাটর্নি জেনারেল তার ভিত্তিতে যে বর্ণনা দিয়েছেন তা কোনো সাধারণ বুদ্ধিসম্পন্ন সচেতন লোকের পক্ষে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এর অযৌক্তিক চরিত্র পরিষ্কার বোঝা যাবে যদি সেই রাতে শেখ মুজিবের বাড়ির রাত্রিকালীন অবস্থার কথা চিন্তা করা যায়। সবাই যে যার কামরায় ঘুমিয়ে ছিল। শেখ রাসেলও তার নিজের কামরায় ঘুমিয়ে ছিল। সামরিক বাহিনীর ঘাতকরা বাড়িতে ঢুকে গুলিগালা ও তাণ্ডব শুরু করার পর সবারই ঘুম ভেঙে যায়। সেই অবস্থায় রাসেলের পক্ষে তার দুই ভাবীর কাছে দৌড়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা খুব স্বাভাবিক, যখন তার পিতা-মাতাকে এরই মধ্যে হত্যা করা হয়েছে। প্রাণভয়ে কাপড়ের আলনা বা কোনো পর্দার আড়ালে সেই কোমলমতি বালকের আশ্রয় নেয়ার মধ্যে দোষের বা কাপুরুষতার কোনো ব্যাপার নেই। এসব স্বাভাবিক। অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল যে ভাষ্য উপস্থিত করেছেন তা অস্বাভাবিক। বাড়ির অন্যদের যখন হত্যা করা হয়েছে, শেখ মুজিবের লাশ যখন সিঁড়ির ওপর পড়ে আছে, তখন শেখ রাসেল কীভাবে ওপরতলা থেকে মোহিতুল ইসলামের হাত ধরে নিচের তলায় আসতে পারে?
এখানে জোর দিয়ে যা বলা দরকার তা হলো, এ ধরনের ঘটনার কোন ভাষ্য খাঁটি সত্য এটা নির্ধারণের কোনো উপায় নেই। ঐতিহাসিক বিশ্লেষণের এমন কোনো নির্ধারিত ও সর্বসম্মত নিয়ম নেই, যা দিয়ে কোনো ঘটনার সত্যাসত্য চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করা যায়। তাছাড়া কোনো ঐতিহাসিক বিষয়ে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করাও চলে না। যে কোনো আদালত কোনো মামলার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনের ও বিচার পদ্ধতির দ্বারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও রায় প্রকাশ করতে পারেন। কিন্তু সেটা যে সবার মেনে নিতেই হবে, এমন বাধ্যবাধকতা কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নেই।

এক্ষেত্রে অন্য কথার আগে এটা বলা দরকার যে, উপন্যাস ও ইতিহাস এক জিনিস নয়। ঔপন্যাসিক কোনো ঐতিহাসিক ঘটনা অবলম্বন করে গল্প লেখার সময় ইতিহাস লেখেন না। তাছাড়া ‘দেয়াল’ উপন্যাসের ক্ষেত্রে হুমায়ূন যদি শেখ রাসেলের হত্যাবিষয়ক ঘটনার বর্ণনায় সরকারি ভাষ্য ছাড়া অন্য কিছু বলে থাকেন তাতে এমন কি এসে যায় যাতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে এ নিয়ে হাইকোর্টে নালিশ করতে হবে, অগ্রহণযোগ্য হিসেবে বাতিল না করে হাইকোর্টকে ‘আশা’ ব্যক্ত করতে হবে যাতে হুমায়ূন তার বর্ণনা পরিবর্তন করে সরকারি ‘সত্য’ ভাষ্য তার উপন্যাসে নতুন করে লেখেন?
অবস্থা দেখে মনে হয়, ১৫ আগস্ট রাতে ৩২ নম্বর ধানমন্ডিতে শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের সময় বালক শেখ রাসেল যে ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে ছিল, ঘাতক মিলিটারি অফিসারের বন্দুকের নল দেখে তাদের পরিবারের সদস্য হিসেবে সাহসী রাসেলের পক্ষে যে পর্দার আড়ালে কাঁপতে থাকা এবং প্রাণ রক্ষার আবেদন করার মতো কিছু ঘটতে পারে না, এটা প্রমাণ করার জন্যই রাসেলের হত্যার সরকারি ভাষ্য তৈরি করা হয়েছে!! ১৯৭২ সাল থেকেই ইতিহাসের ছোট-বড়, গুরুত্বপূর্ণ, এমনকি তুচ্ছ ঘটনার বিকৃত ভাষ্য প্রচার করার যে সংস্কৃতি আওয়ামী লীগ গায়ের জোরে চালু করেছে—এসব হলো তারই ধারাবাহিকতা।

পরিশেষে এটা বলা দরকার যে, সরকারি অ্যাটর্নি জেনারেলের আবেদনের দ্বারা লেখকের স্বাধীনতায় যেভাবে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে আমরা তার তীব্র প্রতিবাদ করি। সরকারের এই হস্তক্ষেপ প্রমাণ করে, বাংলাদেশে সরকারের ফ্যাসিবাদী কার্যকলাপ সমাজের কত গভীর দেশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। জনগণের সভা-সমিতি-মিছিলের অধিকার হরণ থেকে নিয়ে সব রকম রাজনৈতিক কাজের ওপর যেভাবে হাজার রকমভাবে নিষেধাজ্ঞা বলবত্ করে জনগণের টুঁটি টিপে ধরার ব্যবস্থা হয়েছে, হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের ওপর হামলা তার থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো ব্যাপার নয়। লেখকদের স্বাধীনতার ওপর ফ্যাসিস্ট হামলার প্রস্তুতিও যে এগিয়ে চলেছে, এর থেকে সেটাই প্রমাণিত হয়। হুমায়ূন আহমেদ এই পরিস্থিতিতে কি করবেন সেটা তার ব্যাপার। তবে আমি এ কথা অবশ্যই বলতে পারি যে, এই ধরনের হস্তক্ষেপ আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। আমি হলে এ নিয়ে আমার ভাষ্য পরিবর্তন তো করতামই না, উপরন্তু প্রয়োজন হলে অবশ্যই পাল্টা মামলা করতাম। 

১৬.০৫.২০১২

রবিবার, ১৩ মে, ২০১২

মন্ত্রিসভা না ঘুষ-দুর্নীতির আখড়া?



ব দ র“ দ্দী ন উ ম র


গত ১৭ এপ্রিল বিশ্বব্যাংকের ঢাকা¯’ প্রতিনিধি অ্যালান গোল্ডস্টেইন পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক অর্থায়ন বিষয়ে একটি বিবৃতি দেন। তাতে তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ সরকারের কাছে পদ্মা সেতু প্রকল্পে গুর“তর দুর্নীতির তথ্য সেপ্টেম্বর ২০১১ থেকে প্রদান শুর“ করে। বিশ্বব্যাংক নিজস্ব তদন্তে আ¯’া রাখে এবং আমরা বাংলাদেশ সরকারকে জোরালো অনুরোধ করব, যেন দেশের নিজস্ব আইন অনুসারে এই গুর“তর বিষয়ে তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনে।’ (প্রথম আলো ১০.৫.২০১২)


পত্রিকাটির রিপোর্টে আরও বলা হয় যে, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগসংবলিত একটি প্রতিবেদন দিয়েছিল। এরপর বিশ্বব্যাংক সূত্র থেকে জানা যায়, ওয়াশিংটনে অব¯ি’ত বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতি প্রতিরোধ সংক্রান্ত সং¯’া ইন্টেগ্রিটির ভাইস প্রেসিডেন্টের দফতর থেকে গত এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে অর্থমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে তার কাছে আরও একটি প্রতিবেদন দেয়া হয়। বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, অর্থমন্ত্রীর কাছে দেয়া প্রতিবেদনে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে দু’জনের নাম উল্লেখ করে তাদের বির“দ্ধে ব্যব¯’া নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কানাডাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিন সম্পর্কে কানাডা পুলিশের তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য এই প্রতিবেদনে দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনটি হাতে পেয়ে সরকার কোন পদক্ষেপ নেয়নি এবং সরকারপক্ষ থেকে এ বিষয়ে কিছু বলাও হয়নি।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রদত্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে, সেতুর মূল অংশের প্রাকযোগ্যতা চুক্তির প্রক্রিয়ায় দুর্নীতিসংক্রান্ত অসংখ্য অভিযোগ পেয়েছে বিশ্বব্যাংক। অভিযোগগুলো মূলত যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন ও তার মালিকানাধীন কোম্পানি ‘সাকো’র উ”চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বির“দ্ধে। যোগাযোগমন্ত্রীর মালিকানাধীন কোম্পানি ‘সাকো’কে অর্থ বা ঘুষ না দিয়ে কাজ পাওয়ার কোন উপায় ছিল না। ‘সাকো’র পক্ষ থেকে ঠিকাদারদের ভয়ভীতি দেখানোর বিষয়টিও বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টটিতে উল্লেখ করা হয়।


এরপর যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের বির“দ্ধে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে তাকে অন্য এক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়! তার কোম্পানির বির“দ্ধেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি!! উপরš‘ দুদক এ বিষয়ে নামমাত্র একটি তদন্ত করে বলে যে, বিশ্বব্যাংক-কথিত কোন দুর্নীতির প্রমাণ তারা পায়নি!!! নতুন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, দুদক তো তদন্ত করে বলেছে যে কোন দুর্নীতি হয়নি! তা ছাড়া সরকার তো যোগাযোগমন্ত্রী, সচিব, পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিচালককে মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দিয়েছে। অর্থমন্ত্রীকে রিপোর্ট দেয়া হলেও তিনি কিছুই করেননি! নতুন যোগাযোগমন্ত্রীও তার পূর্ববর্তী যোগাযোগমন্ত্রীকে বেকসুর খালাস করেছেন!! তবে গত ২০-২২ এপ্রিল ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিকে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বলে দেয়া হয়েছে যে, দুর্নীতির বির“দ্ধে কোন ব্যব¯’া গ্রহণ না করলে তারা পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোন অর্থায়ন করবে না। (প্রথম আলো ১০.৫.২০১২)


বর্তমান হাসিনা সরকারের সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন যে এক মস্ত এবং ঘোরেল দুর্নীতিবাজ, এটা অনেক আগেই বাংলাদেশের লোকের জানা হয়েছিল। শুধু পদ্মা সেতু প্রকল্পই নয়, যোগাযোগের সব ক্ষেত্রে তার দুর্নীতির লম্বা হাত বিস্তৃত ছিল। এ কারণে তাকে মন্ত্রিত্ব থেকে অপসারণের দাবি ব্যাপকভাবে উঠেছিল। কিš‘ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অতি প্রিয় পাত্র এই দুর্নীতিবাজ ও ঘুষখোর আবুল হোসেন। কাজেই তাকে মন্ত্রিত্ব থেকে অপসারণ করা সম্ভব ছিল না। পরে দেশের লোকের সঙ্গে বিশ্বব্যাংক পর্যন্ত যখন তার অপসারণের জন্য জোরালো দাবি জানাল, তখন তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বিদায় না করে অন্য মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হল! অর্থাৎ তার দুর্নীতি, ঘুষখোরি বন্ধ না করে এবং এ জন্য তাকে কোন শাস্তি না দিয়ে অন্যখানে নিয়ে তার নতুন চুরি, ঘুষখোরির ব্যব¯’া করা হল। এক্ষেত্রে শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, অর্থমন্ত্রী, নতুন যোগাযোগমন্ত্রীসহ গোটা মন্ত্রিসভাই একজোট হয়ে কাজ করছে। বাংলাদেশে শুধু খুনখারাবি, অপহরণ ইত্যাদির জন্যই যে কারও শাস্তির ব্যব¯’া নেই, তা নয়। নাকের ডগায় ও চোখের সামনে সরকারি মন্ত্রী থেকে নিয়ে আমলারা এবং কর্মী লোকেরা গোপনে তো বটেই, এমনকি প্রকাশ্যে দুর্নীতি, চুরি, ঘুষখোরি করলেও তাদের শাস্তির যে কোনই ব্যব¯’া নেই, এটা দুর্নীতিগ্রস্ত যোগাযোগমন্ত্রীকে মন্ত্রিত্ব থেকে বরখাস্ত না করে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক তাকে শুধু অন্য মন্ত্রণালয়ে বদলি করার বিষয়টি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। এটা রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ঘুষখোরি হাতেনাতে ধরা পড়ার পরও তাকে বরখাস্ত না করে তার মন্ত্রিত্ব বদল করার মধ্যেও দেখা যায়।


বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের মতো দেশগুলোয় ঋণের মাধ্যমে অনেক রকমভাবে সরকারের হাত মোচড় দেয়। কিš‘ তাই বলে নিজেদের দেয়া ঋণ নিয়ে কোন দেশের সরকারি কর্মকর্তারা দুর্নীতি ও চুরি, ঘুষখোরি করবে, এটা তারা করতে দিতে পারে না। কাজেই দুর্নীতির কোন সুরাহা না হলে তারা পদ্মা সেতুর প্রকল্পে কোন অর্থায়ন করবে না, এটা স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিয়েছে। এর ফলে পদ্মা সেতুর নির্মাণ এখন অনিশ্চিত হয়েছে, অথচ এ সেতু তৈরির ওপর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাতায়াত ব্যব¯’া এবং অর্থনীতির উন্নতি অনেকখানি নির্ভর করছে।


এক্ষেত্রে অবশ্যই বলা দরকার যে, বিশ্বব্যাংক কর্তৃক যোগাযোগমন্ত্রী ও তার কোম্পানির বড় রকম দুর্নীতির অভিযোগ সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী তার আচরণের মাধ্যমে প্রমাণ করছেন যে, তিনি এই দুর্নীতিবাজ ও ঘুষখোর মন্ত্রীর পক্ষে!
দুদক এখন সরকারের ধামাধরা। তারা একটা নামমাত্র, দায়সারা তদন্ত করে আবুল হোসেনকে নির্দোষ সার্টিফিকেট দিয়েছে! এসব দেখে কেউ যদি বলে যে, যোগাযোগমন্ত্রীর দুর্নীতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী থেকে নিয়ে মন্ত্রিপরিষদের অন্য গুর“ত্বপূর্ণ সদস্যদের সম্পর্ক আছে, তাহলে তাকে কি যুক্তিসঙ্গতভাবে দোষারোপ করা যায়! তাছাড়া এখানে উল্লেখ করা দরকার যে, আবুল হোসেন এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে বদলি করা হয়েছে। কিš‘ কেন? তারা নির্দোষ হলে তাদের বদলি করা হল কেন? বিশ্বব্যাংক অর্থমন্ত্রীর কাছে দুর্নীতি বিষয়ে যে রিপোর্ট প্রদান করেছে, সে রিপোর্ট জনগণের অবগতির জন্য প্রকাশ করা হ”েছ না কেন? তার মধ্যে যদি কোন ভুল থাকে, তাহলে সে ভুল চিহ্নিত করা জনগণের পক্ষে কঠিন নয়। তা ছাড়া শুধু জনগণই নয়, দেশে অনেক ওয়াকিবহাল এবং বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি আছেন, তারাও রিপোর্টটির বক্তব্য সহজেই যাচাই করতে পারেন। কিš‘ এসব কিছু না করে, রিপোর্টটি গোপন রেখে অর্থমন্ত্রী দুর্নীতির বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার ব্যব¯’াই করেছেন এবং যেহেতু দুর্নীতি বিষয়ে কোন কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোন অর্থায়ন করবে না, এ কারণে তারা এখন এই অর্থায়নের জন্য অনেক অর্থ সং¯’ার দরবারেই টোকা মারছেন!


বাংলাদেশ যে দুনিয়ার মধ্যে সব থেকে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং চোর, ঘুষখোররা যে এ দেশের শাসন কাজ পরিচালনা করে, এটা সারা বিশ্বে এক পরিচিত এবং আলোচিত বিষয়। এখন পদ্মা সেতু নিয়ে যে কেলেংকারি যোগাযোগমন্ত্রী থেকে নিয়ে অর্থমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত করছেন, এর থেকে প্রমাণিত হ”েছ যে, নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার এবং তাদের মন্ত্রিসভা দেশের শাসন কাজ পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে পরিণত হয়েছে ঘুষ-দুর্নীতির এক শক্তিশালী আখড়ায়।
১২.৫.২০১২

বুধবার, ৯ মে, ২০১২

সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ



ব দ রু দ্দী ন উ ম র
‘সন্ত্রাসের’ বিরুদ্ধে যুদ্ধই এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সাম্রাজ্যবাদী এজেন্ডা! তাদের এই এজেন্ডার একটা মহাহাস্যকর দিক আছে। কারণ এই রাষ্ট্রটি আজকের দুনিয়ায় নিজেই সব থেকে মারাত্মক সন্ত্রাসী রাষ্ট্র!! এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকায় খুব কম রাষ্ট্রই আছে যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী হামলার বাইরে। তারা যা করে সেটা শুধু সন্ত্রাসী হামলাই নয়, এই সন্ত্রাসী হামলা সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে পরিচালনা করে তারা দেশের পর দেশ দখলও করে। আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া হলো এর সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত। কিন্তু মিথ্যাচার ও ভাঁওতাবাজিতে সাম্রাজ্যবাদীদের সঙ্গে পাল্লা দেয়া অন্য কারও পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ এই মিথ্যার পেছনে থাকে তাদের গায়ের জোর। কাজেই কোনো দুর্বল দেশ এই ধরনের মিথ্যা বললে বা ভাঁওতাবাজি করলে তাকে যে শাস্তি পেতে হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার থেকে নিরাপদ থাকে। মিথ্যাচারের যেখানে নিরাপত্তা আছে সেখানে মিথ্যাচর্চা যে অবাধ হবে এটা স্বাভাবিক। কয়েকদিন আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ঢাকায় এসে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সংগ্রামে বাংলাদেশের ভূমিকা ও কৃতকার্যতার ভূয়সী প্রশংসা করেন! আসলে এ সংগ্রাম হলো এমন যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসেরই পরিপূরক এবং সহায়ক। এছাড়া বাংলাদেশের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের অন্য কোনো বোধগম্য অর্থ নেই।হিলারি ক্লিনটন সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে বাংলাদেশের সাফল্যের প্রশংসা করেছেন। এই যুদ্ধ বাংলাদেশ কীভাবে করল? এর একমাত্র দৃষ্টান্ত আমরা দেখি উত্তর-পূর্ব ভারতের কয়েকটি অঞ্চলে যারা নিজেদের ভাষা ও জাতীয়তার ভিত্তিতে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছে তাদের মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া নেতাকে গ্রেফতার করে ভারতের হাতে তুলে দেয়া। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো extradition treaty বা বন্দী বিনিময় চুক্তি নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আইন সম্পূর্ণভাবে লঙ্ঘন করে এই গর্হিত কাজ করেছে। এটা ভারতের তো বটেই, এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও বড়ই পছন্দের কাজ!! এই কাজের জন্যই হিলারি ক্লিনটন কর্তৃক ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে’ বাংলাদেশের প্রশংসা!বাংলাদেশে পাকিস্তান বা ভারতের মতো কোনো জঙ্গি তত্পরতা না থাকলেও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কর্তৃক সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে বাংলাদেশের সাহায্যে সন্তোষ প্রকাশের কারণ ভারতের কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে অপহরণ করে গোপনে ভারতের হাতে তুলে দিয়ে মার্কিন স্টাইলে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়া। এদিক দিয়ে বাংলাদেশের কাজ যে কোনো সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের থেকে অন্য প্রকার নয়। কিন্তু সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের পরিচয় এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এই রাষ্ট্রের সন্ত্রাস মূলত অভ্যন্তরীণ। সরকারের বিরুদ্ধে, তাদের রাজনীতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে যারা দাঁড়ায়, তাদের বিরুদ্ধে এদের সন্ত্রাস এখন এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যাতে এই রাষ্ট্রকে চরম সন্ত্রাসী ছাড়া অন্য কিছু বলা যায় না। সাধারণ রাজনৈতিক কাজকর্মে নিযুক্ত, কিন্তু আওয়ামী লীগবিরোধী, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এখন বাংলাদেশ সরকার বেপরোয়া সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হলো এমন এক সন্ত্রাসী রাষ্ট্র যে মূলত আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সন্ত্রাস করে, অন্য দেশের ওপর হামলা করে। বাংলাদেশ হলো এমন এক সন্ত্রাসী রাষ্ট্র যে নিজের দেশের ভেতরেই সন্ত্রাসী হামলা পরিচালনা করে। বিশেষ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া বিদেশিরা তাদের সন্ত্রাসের লক্ষ্যবস্তু হলেও, মূল লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে দেশের জনগণ। ১৯৭১ সালের পর শেখ মুজিবের নেতৃত্বে তত্কালীন আওয়ামী লীগ নিজেদের বেসরকারি ঠেঙাড়ে বাহিনী ছাড়াও রক্ষীবাহিনী নামে এক সরকারি ফ্যাসিস্ট বাহিনী গঠন করেছিল। তাদের মাধ্যমেই অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস পরিচালিত হতো। সে সময় হাজার হাজার শ্রমিক এবং বিরোধীদলীয় কর্মী ও নেতাকে, বিশেষত বামপন্থীদেরকে, রক্ষীবাহিনী খুন করে গুম করত। নদীতে ফেলে দিত। ১৯৭৫ সালের পর শেখ মুজিবের রক্ষীবাহিনী উঠিয়ে দেয়া হলেও পরবর্তীকালে পুলিশ এবং অন্যান্য বাহিনীর মাধ্যমে একই কাজ করা হতো। ২০০৩ সালে এখানে গঠিত হলো র্যাব। র্যাব গঠনে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশ ও সহায়তা ছিল এটা র্যাবকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে তাদের স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রকাশ্য তাগিদ থেকেই বোঝা যেত। সেই র্যাব এখন এ দেশে ক্রসফায়ার ইত্যাদির মাধ্যমে এক ফ্যাসিস্ট বাহিনী হিসেবে জনগণের কাছে পরিচিত হয়েছে। পুলিশের একটা নিয়মকানুন আছে যা মান্য করে চলার থেকে লঙ্ঘিত হয় বেশি। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের একটা জবাবদিহিতা আছে। কিন্তু র্যাবের সে সব কিছুই নেই। এখন সরকার পুলিশ ও র্যাবকে দিয়ে অবৈধভাবে নানা সন্ত্রাসী কাজ করিয়ে নিতে থাকার ফল হিসেবে পুলিশ ও র্যাবের উচ্চ পদস্থ অফিসাররা পর্যন্ত ডাকাতি, খুন-খারাবি, প্রতারণা ইত্যাদি কাজে প্রায় লিপ্ত থাকছে ও কোনো কোনো সময় ধরা পড়ছে। এদের এই কার্যকলাপ এখন রক্ষীবাহিনীর কার্যকলাপের মতোই দাঁড়িয়েছে। অপহরণ, গুম, খুন, ক্রসফায়ার ইত্যাদি এখন তাদের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসের মূল রূপ।রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের একটা উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড এখন দাঁড়িয়েছে দেশের জনগণের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস। এ পরিস্থিতিতে সমগ্র জনগণের মধ্যেই নিরাপত্তার অভাব ব্যাপকভাবে অনুভূত হচ্ছে। অপহরণ ও গুম-খুন এখন যে শুধু ওপরতলার রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে তা নয়। এটা এখন এমন আশঙ্কাজনকভাবে বিস্তারলাভ করেছে যে কেউই আর নিজেকে নিরাপদ মনে করে না। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের অনেক অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এখানে এসে কথা বলেছেন। কিন্তু ইলিয়াস আলী ও আমিনুল ইসলামের অপহরণ ও গুম হওয়ার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করা ছাড়া তাঁর অন্য কোনো বক্তব্য এ ব্যাপারে থাকেনি। এ দুই ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই উল্লেখ করে তিনি নিজের দায়সারা বক্তব্য দিয়েছেন। এসবই যে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসেরই দৃষ্টান্ত এ বিষয়ে তাঁদের পক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়। কারণ তাঁরা নিজেরাই তাঁদের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোতে এই ধরনের সন্ত্রাস নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী পরিচালনার চক্রান্ত করে থাকেন। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তাদের ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী মিত্ররা এবং ভারতসহ অন্যান্য দেশ বাংলাদেশকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র না বললেও, কার্যত বাংলাদেশ একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্র যেভাবে এখন বিভিন্ন সরকারি বাহিনীর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস ফ্যাসিস্ট কায়দায় চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতা বলতে আর কিছু নেই। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সরকারি লোকজন, তাদের নেতানেত্রীরা গদগদভাবে যতই মিথ্যা বলুক, তারা যেভাবে এখন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনগণের স্বাধীনতা সর্বতোভাবে হরণ করেছে তাতে তাদের কথাবার্তা মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ইত্যাদিকে ভেংচি কাটারই শামিল।৯.৫.২০১২

সোমবার, ৭ মে, ২০১২

মুরবি্বদের বাংলাদেশ সফর


বদরুদ্দীন উমর
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তিনি হিলারির সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলেন। আওয়ামী লীগ এ দেশে গুম, হত্যাসহ যেসব অনাচার করছে সে বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। একজন বিদেশি মন্ত্রীর সঙ্গে দেশের এসব সমস্যা নিয়ে কথা বলার অর্থ এ ক্ষেত্রে তাদের হস্তক্ষেপ কামনা। এটা যে কোনো মতেই সঠিক ও সমর্থনযোগ্য কাজ নয়_ এটা বলাই বাহুল্য। আমরা আমাদের দেশে সাম্রাজ্যবাদীদের হস্তক্ষেপের কথা সবসময়ই বলে থাকি। কিন্তু আমরা যদি নিজেরাই গায়ে পড়ে দেশীয় ব্যাপারে তাদের হস্তক্ষেপ চাই তাহলে সেটা যে দূষণীয় ব্যাপার এতে আর সন্দেহ কি?

দুনিয়াতে বিদেশি রাজনৈতিক নেতা ও কূটনীতিবিদদের আসা-যাওয়া হামেশাই হয়ে থাকে। এর মধ্যে দোষের কিছু নেই। কিন্তু দোষ দাঁড়ায় তখনই, যখন তারা আসেন জমিদারি পরিদর্শনের মতো লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও মেজাজ নিয়ে। এই মাত্র বাংলাদেশে দু'দেশের দুই মন্ত্রী এসে ফেরত গেলেন। তাদের আগমন উপলক্ষে ঢাকায় শুধু সাজসাজ রবই ওঠেনি, মনে হলো তাদের আগমনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে নিয়ে তার সাঙ্গপাঙ্গদের দল এবং বিরোধী নেত্রী নিজেদের ধন্যজ্ঞান করলেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন আসার আগে থেকেই মার্কিন দূতাবাস ও সরকার পক্ষ থেকে বলা হতে থাকল যে, এই সফর এক যুগান্তকারী ব্যাপার। এর ফলে দু'দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। বাংলাদেশ অনেক লাভবান হবে। আসলে এ ধরনের কোনো উচ্চ পর্যায়ের কূটনীতিক কোনো দেশে এসে চুক্তি স্বাক্ষর করার আগেই সে চুক্তির খসড়া তৈরি থাকে। দু'দেশের বৈদেশিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ স্থানীয় আধিকারিকদের মধ্যে এর ওপর বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে সেগুলো তৈরি হয়। সফরকারী সরকারি নেতারা তার ওপর সামান্য কথাবার্তা বলে স্বাক্ষর দেন। কাজেই এই নেতাদের ঢাকঢোল পেটানো সফরের আগেই 'যুগান্তকারী' যা হওয়ার তা হয়ে থাকে। তাদের কাজ শুধু হয় গৃহীত সিদ্ধান্তে সিল-ছাপ্পর মারা। কাজেই এক্ষেত্রে 'যুগান্তরকারী' যে ব্যাপারটি ঘটে তা হলো, দু'দেশের নেতৃত্বের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ ও কথাবার্তা, যার গুরুত্ব সৌজন্যমূলকের বেশি নয়। হিলারি ক্লিনটনের সফরের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি সেদেশের একজন খুব গুরুত্বপূর্ণ নেতা। কিন্তু তিনি এসে কোনো চুক্তি বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষর করেননি। বাহ্যত তার সফরের উদ্দেশ্য ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মের সার্ধশতবর্ষের উৎসবের শেষ পর্বে যোগদান। তিনি অবশ্য তার সংক্ষিপ্ত সফরে দ্বিপক্ষীয় কিছু কিছু বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেত্রী এবং কিছু সরকারি আধিকারিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তার আগমন নিয়েও এখানে যে হুলস্থূল ভাব দেখা গেল সেটা উপেক্ষা করার ব্যাপার নয়। এর থেকে বোঝা যায় ভারত ও বাংলাদেশের পারস্পরিক সম্পর্কের চরিত্র। এটা বলাই বাহুল্য যে, বাংলাদেশের কোনো মন্ত্রী তো নয়ই এমনকি প্রধানমন্ত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত সফরে গেলে এ ধরনের কোনো হৈচৈ সরকারি প্রশাসনে
হয় না।
এবার প্রণব মুখার্জর্ি রবীন্দ্র উৎসবে আসার কারণে তাকে নিয়ে তুলনামূলকভাবে কোনো বড় হৈচৈ হয়নি। তাছাড়া তিনি বলেই গেছেন যে, দু'দেশের মধ্যে যেসব সমস্যা আছে সেগুলোর সহজ সমাধান এখনই সম্ভব নয়। তার জন্য সময় লাগবে। আরও অনেক দ্বিপক্ষীয় আলোচনার প্রয়োজন হবে। ভারত সরকার আওয়ামী লীগের প্রতি অধিকতর বন্ধুভাবাপন্ন, এ ধারণার বিরোধিতা করে তিনি বলেছেন যে, এটা ভুল। তাদের সম্পর্ক বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের সঙ্গে। কাজেই বাংলাদেশের জনগণ যে দলকেই নির্বাচিত করবে তারা তার সঙ্গে একই রকম সম্পর্ক বজায় রাখবেন। একথা তিনি মিসেস জিয়ার সঙ্গে আলোচনার সময়ে তাকেও বলেছেন। কথাটা একেবারে মিথ্যা নয়। অতীতেও দেখা গেছে, এ দেশের যে কোনো সরকারের সঙ্গেই ভারত একই প্রকার সম্পর্ক রেখে কাজ করে। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময় বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপ ছিল এমন বলা যায় না। মিসেস জিয়ার দু'দফা সরকারের সময়ও তাই ছিল। তবে একথা ঠিক যে, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে বাড়াবাড়ি রকম অধীনতার ভাব দেখায়, যতখানি জোহুজুরগিরি করে, সেটা অন্যদের ক্ষেত্রে একইভাবে দেখা যায় না। যদিও কার্যক্ষেত্রে তাদের মধ্যে পার্থক্য অবশ্যই থাকে। এখানে অবশ্য বলা দরকার যে, এই সফরে এসে নির্বাচন সামনে রেখে ভারতের সব থেকে প্রভাবশালী মন্ত্রী কর্তৃক কোনো দলের প্রতি বিশেষ পক্ষপাতিত্বের কথা অস্বীকার করার বিষয়টি তাৎপর্যহীন নয়।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তিনি হিলারির সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলেন। আওয়ামী লীগ এ দেশে গুম, হত্যাসহ যেসব অনাচার করছে সে বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। একজন বিদেশি মন্ত্রীর সঙ্গে দেশের এসব সমস্যা নিয়ে কথা বলার অর্থ এ ক্ষেত্রে তাদের হস্তক্ষেপ কামনা। এটা যে কোনো মতেই সঠিক ও সমর্থনযোগ্য কাজ নয়_ এটা বলাই বাহুল্য। আমরা আমাদের দেশে সাম্রাজ্যবাদীদের হস্তক্ষেপের কথা সবসময়ই বলে থাকি। কিন্তু আমরা যদি নিজেরাই গায়ে পড়ে দেশীয় ব্যাপারে তাদের হস্তক্ষেপ চাই তাহলে সেটা যে দূষণীয় ব্যাপার এতে আর সন্দেহ কি?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের দেশে এমনিতেই একশ' রকমে হস্তক্ষেপ করে। তাদের রাষ্ট্রদূত ঢাকায় বসে এখানকার সরকার, বিরোধী দল এবং সবকিছু সম্পর্কে ইচ্ছামতো কথাবার্তা বলে থাকেন। আমাদের দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ নীতি কী হওয়া দরকার এ বিষয়ে তারা বেশ খোলাখুলি নির্দেশের মতো করেই কথা বলেন। এর ভিত্তি যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই তৈরি হয়েছে এটা এ দেশের শাসকশ্রেণীর সংকটজনক অবস্থার মধ্যেই দেখা যায়। এই সংকট বাংলাদেশের সমাজ ও শাসন ব্যবস্থার সর্বক্ষেত্রেই ধস নামাচ্ছে। এই ধসে পড়তে থাকা অবস্থায় যে কোনো দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন থাকা তো দূরের কথা, প্রায় খতম হওয়ার মতো অবস্থায় এসে দাঁড়াবে এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশে আজ সেই অবস্থাই বিরাজ করছে।
দুনিয়ার ইতিহাসে সবসময়েই, সব দেশেই দেখা গেছে অভ্যন্তরীণ শাসন দুর্বল ও সংকটজনক হওয়া এবং ভেঙে পড়তে থাকার সময় সে দেশ বহির্শত্রুর আক্রমণের লক্ষ্যস্থল বা টার্গেটে পরিণত হয়। দেশে শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটে। এই সাধারণ নিয়ম বর্তমান দুনিয়াতেও একইভাবে কার্যকর। এ কারণে দেখা যায় যে দেশ অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে যত দুর্বল, সে দেশে বৈদেশিক ও সাম্রাজ্যবাদী তৎপরতা, অনুপ্রবেশ ও দখলদারি তত বেশি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আজ কেন বিপন্ন, প্রায় অনুপস্থিত এবং নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে এ বিষয়টি বোঝার জন্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অবস্থার দিকে তাকানো দরকার।
বাংলাদেশের মতো দেশকে বলা হয়ে থাকে নির্ভরশীল (ফবঢ়বহফবহঃ) দেশ। এই নির্ভরশীলতা কার ওপর? নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে সরকার যাদের কাছে দেনদরবার করে, যাদের থেকে ঋণ নেয়, যাদের সঙ্গে অসম বাণিজ্য চুক্তি করে, যাদের কাছে দেশের সম্পদ পাচার করে, যাদের কাছে বেকার শ্রমিকের জোগান দেয় এবং যাদের কাছ থেকে নিয়মিতভাবে ধমক খায় তারাই হলো বাংলাদেশের মুরবি্ব রাষ্ট্র। বাংলাদেশ হলো তাদের মক্কেল রাষ্ট্র (ঈষরবহঃ ংঃধঃব)। এই রাষ্ট্রগুলো হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এমনকি সৌদি আরব। এসব দেশের ওপরই বাংলাদেশ আজ নির্ভরশীল।
বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই যে, এসব দেশের উচ্চমার্গের নেতা-নেত্রীরা, এমনটি মাঝারি পদের লোকেরা যখন বাংলাদেশে আসেন তখন এখানকার সরকার ও সফরকারী দেশের প্রতিনিধিদের আচরণ দেখে মনে হয়, সফরকারীরা আসেন জমিদারি পরিদর্শনে। তাদের এই সফরের উদ্দেশ্য সবসময়েই হয় এ দেশের থেকে নানা সুবিধা আদায় ও সম্পদ লুণ্ঠন।
হিলারি ক্লিনটনের উপস্থিতিতে ঢাকায় যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে তার কোনো বিবরণ জনগণকে জানানো হয়নি। যেটুকু প্রকাশ করা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছুই নেই। মুরবি্ব ও মক্কেল দেশের মধ্যে চুক্তির এটা হলো এক সাধারণ দিক। এবারও সরকারিভাবে হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তির যে বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে তাকে বড়জোর বলা চলে একটা ফবপষধৎধঃরড়হ ড়ভ রহঃবহঃ. সদিচ্ছার ঘোষণা। এর মধ্যে আর কিছু নেই। হিমবাহের মাত্র এক-দশমাংশ যেমন পানির ওপর দেখা যায়, ঠিক সেভাবেই এসব চুক্তির অতি সামান্য অংশই প্রকাশ করা হয়। বাকি অংশ গোপনই থাকে। সেই অনুযায়ীই কাজ হয়। এ কারণে এ চুক্তিগুলোর পূর্ণ বিবরণ কোনো সময়ই জনগণের অবগতির জন্য প্রকাশ করা হয় না। শুধু দেশে এসে বিদেশিরা যেসব চুক্তি স্বাক্ষর করেন সে ক্ষেত্রেই যে এ রকম হয়, এমন নয়। আমাদের সরকারি প্রতিনিধিরা আমেরিকা, ভারত বা এই ধরনের অন্য দেশে গিয়ে যেসব চুক্তি স্বাক্ষর করেন সেসব ক্ষেত্রেও এই একই ব্যাপার। গত বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দিলি্লতে গিয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন তার কোনো বিবরণ আজ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তারপর থেকে অনেক কিছুই করে চলেছে। সেগুলো যে ওই চুক্তির আওতায় তাতে ওয়াকিবহাল মহলের কোনো সন্দেহ নেই। এবারও হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে তাতে সামরিক ও বেসামরিক ক্ষেত্রে তাদের কী এজেন্ডা তারা কার্যকর করবে এটা জনগণের জানার কোনো উপায় নেই। তবে এই চুক্তির ভুক্তভোগী যে তারা হবেন, এতে আর সন্দেহ কি?
৭.৫.২০১২

রবিবার, ৬ মে, ২০১২

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে

                                      বদরুদ্দীন উমর


যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের লোকজন ও তাদের ঘরানার বুদ্ধিজীবীর দল যেভাবে ও যেসব আওয়াজ তুলছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, খাজনার থেকে এদের বাজনা অনেক বেশি। এর থেকে সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক যে এরা সত্যি সত্যিই ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় কি না। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, বিচার প্রক্রিয়ার শ্লথগতি এবং এ বিষয়ে নানা বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা সরকারি লোকজন বলতে থাকায় আওয়ামী ঘরানার কোনো কোনো মহলও এ বিচারের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
প্রথমেই বলা দরকার, বিচার প্রক্রিয়া ভণ্ডুল করার চক্রান্তের কথা বলে 'ওই গেল ওই গেল' রব তুলে আওয়ামী লীগ মহলের নেতৃস্থানীয় লোকজন কর্তৃক যেসব কথা প্রায় প্রতিদিন বলা হচ্ছে, তাতে এদের এসব বক্তব্য পরিণত হয়েছে এক হাস্যকর ব্যাপারে। বিএনপি ২৭ জুন হরতাল আহ্বান করেছিল। সে হরতালের সমালোচনা তাদের পক্ষ থেকে করা কোনো দোষের ব্যাপার নয়। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া ভণ্ডুল করার জন্যই হরতাল ডাকা হয়েছে বলে তারা যে আওয়াজ তুলেছিল, তার ফাঁকা চরিত্র খুব স্বচ্ছ। কোনো লোকই এ আওয়াজকে পাত্তা দেননি। কারণ, হরতালের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিষয়কে যুক্ত করা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার এক ব্যর্থ প্রচেষ্টা বলেই তাঁরা মনে করেছেন। শুধু হরতালই নয়, দেখা যাচ্ছে বিএনপির যেকোনো কাজ, সিদ্ধান্ত বা কর্মসূচির সমালোচনা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সব সময়ই তাকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ভণ্ডুল করার চক্রান্ত বলে অভিহিত করছে। এতে নিজেদের জনগণের কাছে খেলো করা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিষয়কে খেলো করে দেওয়া ছাড়া অন্য কিছুই হচ্ছে না। অবস্থা এ রকম দাঁড়াচ্ছে এ কারণে যে আওয়ামী লীগ বিরোধী দল কর্তৃক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের কথা যত জোরেশোরে বলছে, এ বিচারকাজ সুষ্ঠুভাবে সংগঠিত ও ত্বরান্বিত করার ব্যাপারে সরকারিভাবে তেমন কিছুই করছে না।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যু কোনো নতুন ইস্যু নয়। বাস্তবত ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরই এ বিচার প্রক্রিয়া শুরু ও তৎকালীন পরিস্থিতিতে দ্রুত সম্পন্ন হওয়া দরকার ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ তখন প্রবল প্রতাপে রাজত্ব করলেও তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেনি। শুধু তাই নয়, এর তালিকা প্রক্রিয়া শুরু করে তারা তালিকাভুক্ত ১৯৫ পাকিস্তানি সামরিক অফিসারের বিচার না করে তাদের পাকিস্তানে ফেরত পাঠিয়েছিল। যদিও তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছিল যে সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলার মাটিতেই হবে। সে বিচার হয়নি, তার পরও বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে যাদের আটক করা হয়েছিল তাদেরও ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজে অংশগ্রহণ করতে। এ কাজ শেখ মুজিব তাদের মন্ত্রিসভার কোনো সিদ্ধান্তের মাধ্যমে করেননি। সাংবিধানিকভাবে ক্ষমা ঘোষণা ছিল রাষ্ট্রপতির এখতিয়ারভুক্ত, তবু প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই তিনি এ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন নিজে এই কাজের কৃতিত্ব গ্রহণের জন্য। এ ক্ষেত্রে সব থেকে 'চমৎকৃত' হওয়ার মতো ব্যাপার ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব কর্তৃক ১৯৭১ সালের সব থেকে বড় ও ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধী জুলফিকার আলী ভুট্টোকে শুধু মাফ করে দেওয়া নয়, ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে লাহোরে ইসলামী সম্মেলনের সময় তাঁকে পরম বন্ধু হিসেবে আলিঙ্গন করে তাঁর গালে চুমু খাওয়া এবং পরে তাঁকে মহাসম্মানিত রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে রাজসিক সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা। এর পর বাস্তবত আওয়ামী লীগের পক্ষে ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কোনো নৈতিক অথবা আইনগত ভিত্তি থাকেনি। ১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময়ও তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। শুধু তা-ই নয়, যখনই প্রয়োজন হয়েছে তখনই তারা জামায়াতে ইসলামী এবং অন্য ধর্মীয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে সমঝোতা করেছে। এসব কিছুর প্রমাণই সংবাদপত্রের পাতায় ছড়িয়ে আছে, কাজেই কারো কিছু বানিয়ে বলার প্রয়োজন নেই।
১৯৯৬ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিষয়ে কোনো উদ্যোগ না নিলেও এখনকার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে চাপে পড়ে তারা এ উদ্যোগ নিয়েছে। খুব ভালো কথা। কিন্তু উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও এ ব্যাপারে যেভাবে অগ্রসর হওয়া দরকার সেটা এদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে এরা নিজেরা ইতিবাচক কাজ করার পরিবর্তে নেতিবাচকভাবে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী কর্তৃক এই বিচার ভণ্ডুল ও বানচাল করার ষড়যন্ত্রের কথাই বেশি বলছে।
বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের অধিকাংশই সততার জন্য বিখ্যাত নন। কাজেই সুযোগ বুঝে তাঁরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিষয়ে অনেক গালভরা কথা বললেও আওয়ামী লীগ সরকারের এই নেতিবাচক কার্যকলাপের বিরোধিতা না করে নিজেরাও এর সঙ্গে সুর মেলাচ্ছেন। এ কাজ করতে গিয়ে অনেক ফালতু কথাই তাঁদের বলতে হচ্ছে।
এবার অন্য এক প্রসঙ্গে আসা দরকার। এ প্রসঙ্গে এবং এ বিষয়ে কোনো কথা আওয়ামী মহলে তো শোনাই যায় না, উপরন্তু কেউ সে কথা বললে তাকে স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করতে দেখা যায়। প্রসঙ্গটি হলো, ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধ শুধু অবাঙালি ও পাকিস্তানপন্থীরাই করেনি। বাঙালিরাও তখন যুদ্ধাপরাধ করেছে। যুদ্ধাপরাধের অর্থ শুধু স্বাধীনতার সক্রিয় বিরোধিতা নয়। যুদ্ধের সময় নিরপরাধ ব্যক্তি এবং আত্দসমর্পণকারী ব্যক্তিদের হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন করাও অপরাধ। এ কাজ তখন দুই পক্ষেই হয়েছিল। ১৯৭১ সালের মার্চ-এপ্রিলে অনেক অবাঙালি নিরাপরাধ নারী-শিশু-বৃদ্ধ ব্যক্তি বাঙালিদের হাতে নিষ্ঠুরভাবে নিহত হয়েছে। আমি নিজের চোখে এ হত্যাকাণ্ড দেখেছি মার্চ মাসের শেষদিকে। আমার আত্দজীবনী 'আমার জীবন'-এর তৃতীয় খণ্ডে আমি এর বর্ণনা দিয়েছি (জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ, পৃষ্ঠা : ১৭২-১৭৩)। এটা এমন ব্যাপার ছিল, যা গোপন বা অস্বীকার করার উপায় নেই।
'মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর' নামে একটি বই ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে 'প্রথমা' প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে। গোলাম মুরশিদ লিখিত বইটিতে এ বিষয়ের কিছু উল্লেখ আছে। এর থেকেও মনে হয়, অবাঙালিদেরও যে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা দরকার এবং তাদেরও যে ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার আছে_এ চিন্তা মুক্তিযোদ্ধা নামে পরিচিত লোকদের ছিল না। এ জন্য হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে সে সময় বাঙালিরা এমনভাবে অনেক অবাঙালি নিধন করেছিল, ঠিক যেভাবে বাঙালি নিধন করেছিল অবাঙালি পাকিস্তানিরা। গোলাম মুরশিদ লিখেছেন, "আইন হাতে তুলে নেওয়ার একটি বড় রকমের দৃষ্টান্ত দেখা যায় ১৮ তারিখ মুক্তিযোদ্ধাদের এক সমাবেশে। এই সমাবেশে দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধারা দেশ গড়ার ব্যাপারে সবাইকে উৎসাহ দেন।...কিন্তু এই সমাবেশের পরেই হঠাৎ মুক্তিযোদ্ধারা চারজন 'দালাল'কে পেটাতে আরম্ভ করেন। বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিলেন কাদের সিদ্দিকী। তাঁকে নিয়ে গর্ব করতাম আমরা সবাই। সত্যিকার অর্থে তিনি যেভাবে নিজে একটি বিশাল মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলেন, তা বিস্ময়ের ব্যাপার। যেভাবে যুদ্ধ করে তিনি টাঙ্গাইল অঞ্চল দখল করে রাখেন, তাও অবিশ্বাস্য। বস্তুত তিনি সবারই শ্রদ্ধা অর্জন করেন। কিন্তু ১৮ তারিখে 'দালাল' পেটানোর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনিই। শেষ পর্যন্ত তিনি বিদেশি টেলিভিশনের সামনে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে এই দালালদের হত্যা করেন" (মাঈদুল, ১৯৯২)। বলাবাহুল্য, আইন হাতে তুলে নেওয়ার এ দৃষ্টান্ত শ্রদ্ধার বস্তু ছিল না। বহু দেশেই এই ঘটনার ছবি দেখানো হয়। ফলে যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বসমাজের যে শুভেচ্ছা ও সহানুভূতি তৈরি হয়েছিল, তখন থেকেই তাতে ভাটা পড়তে আরম্ভ করে (পৃষ্ঠা: ১৭৬-'৭৭)। 'কাদের সিদ্দিকী বেয়োনেট দিয়ে এক দালালকে হত্যা করতে যাচ্ছেন'_এই শিরোনামে একটি ছবিও এতে ছাপানো হয়েছে; যাতে দেখা যাচ্ছে কাদের সিদ্দিকী বেয়োনেট দিয়ে একজনকে হত্যা করে আর একজনকে হত্যা করছেন।
এই অবাঙালি নিধনের জন্য যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বাঙালিদের কারো কোনো বিচার হবে এমন চিন্তা বাংলাদেশে দেশদ্রোহিতার শামিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও এর উল্লেখ করা হলো এ কারণে যে এর মধ্যে দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাদের একটা বড় অংশের উগ্র জাতীয়তাবাদী ফ্যাসিস্ট চরিত্রের প্রতিফলন ঘটে, যে চরিত্র কোনো মতেই প্রশংসাযোগ্য নয়।
২৯.৬.২০১০

শনিবার, ৫ মে, ২০১২

বাংলাদেশে স্বাধীন হয়েছে কারা?


ব দ র“ দ্দী ন উ ম র


১৯৭১ সালে একটা যুদ্ধরে মাধ্যমে স্বাধীনতা র্অজন করে আমরা কী পলোম? এটা বশে কছিুদনি থকেইে এ দশেরে জনগণরে এক হƒদয় মোচড়ানো জজ্ঞিাসা। জনগণরে নজিরে কাছে এ প্রশ্ন স্বপ্নে পাওয়া অথবা আকাশ থকেে পড়া নয়। স্বাধীনতা-উত্তরকালে এদশেে যা ঘটে চলছেে এবং এই ঘটনাপ্রবাহে সাধারণ মানুষরে ভাগ্যে কী এসছে,ে তার দকিে তাকালইে জনগণরে এই জজ্ঞিাসার বাস্তব ভত্তিরি দখো পাওয়া যাব।ে


এসব নযি়ে কথার্বাতা নতুন নয়। কন্তিু এমন কছিু কথা বা বষিয় আছে যা পুরান হয় না। বাংলাদশেে জনগণরে দুরবস্থার কথা তমেনই একট।ি বাংলাদশেরে স্বাধীনতা যুদ্ধরে আসল ইতহিাসরে সঙ্গে যারা পরচিতি তারা জাননে য,ে স্বাধীনতা-উত্তরকালে যারা এদশেে রাজা-উজরি হসিবেে গদতিে বসছেলিনে তারা কোন যুদ্ধ ১৯৭১ সালে করনেন।ি ১৯৭১ সালরে ১৬ ডসিম্বেররে পর যারা বপ্লিবী স্বাধীনতাযোদ্ধা হসিবেে অনকে লম্ফঝম্প করে লুটপাটে অংশগ্রহণ করছেলিনে, ক্ষমতার তলোয়ার ঘুরযি়ছেলিনে, তারা ১৯৭১ সালরে যুদ্ধকালীন প্রায় পুরো সময়টা ভারতীয় জনোরলে ওবানরে অধীনে দরোদুনে কমউিনস্টি ও বামপন্থী নধিনরে ট্রনেংি নযি়ছেলিনে। পাকস্তিান জাতীয় ও প্রাদশেকি আইনসভার সদস্যরা যুদ্ধ করার পরর্বিতে কলকাতায় বসে বা শরর্ণাথী শবিরিগুলো পরর্দিশন করে নজিদেরে আখরে গোছাতে ব্যস্ত ছলিনে। এদকি দযি়ে তাজউদ্দীন আহমদরে মতো সামান্য কছিু ব্যতক্রিম উল্লখেযোগ্য। সক্টের কমান্ডাররা সাধ্যমতো চষ্টো করছেলিনে কন্তিু ভারত সরকার যভোবে নানা ধরনরে নযি়ন্ত্রণরে মাধ্যমে তাদরে হাত-পা বঁেধে রখেছেলি (সক্টের কমান্ডার কাজী নূর“জ্জামানরে ‘যুদ্ধস্মৃত’ি দ্রষ্টব্য) তাতে তাদরে করার বশিষে কছিু ছলি না। মোট কথা, ভারত ও পাকস্তিানে যসেব আওয়ামী লীগ নতো ১৯৭১ সালে পলাতক ছলিনে, যারা কোন যুদ্ধ করনেন,ি যুদ্ধরে ধারকোছওে যারা ছলিনে না, তারাই ১৯৭১ সালরে পর স্বাধীন বাংলাদশেে গদনিশনি হয়ছেলিনে। এভাবে গদনিশনি হতে গযি়ে তারা ১৯৭১ সালরে যুদ্ধরে ইতহিাসকে কুৎসতিভাবে বকিৃত কর,ে মথ্যিার পাহাড় বানযি়ে এক কলঙ্কজনক কাজ করছেলিনে। যে কথা চন্তিা করলে মনে হয়, সারা বাংলাদশেই যনে মথ্যিার ওপর ভাসছ।ে


১৯৭১ সালে যুদ্ধরে সময় এদশেরে শ্রমকি-কৃষক মধ্যবত্তি জনগণ চরম আÍত্যাগ করছেলিনে। তাদরে পরবিাররে অসংখ্য ছলেমেযে়ে শুধু সম্মুখযুদ্ধে বা গরেলিা যুদ্ধইে নয়, অন্য নানাভাবে যুদ্ধরে প্রক্রযি়ায় শামলি হয়ছেলিনে। জীবন দযি়ছেলিনে, অঙ্গহানরি কারণে পঙ্গু হয়ছেলিনে। অসংখ্য নরিীহ মানুষকে পাকস্তিানি সনোবাহনিী হত্যা করছেলি, অগণতি নারী তাদরে দ্বারা র্ধষতি হয়ছেলি। লাখ লাখ মানুষ পাকস্তিানি সনোবাহনিীর আক্রমণ ও নর্যিাতন থকেে রহোই পাওয়ার জন্য নজি দশেে পরবাসী হয়ছেলিনে। তারা পরণিত হয়ছেলিনে অভ্যন্তরীণ শরর্ণাথীত।ে এদকি থকেে বচিার করলে পলাতক আওয়ামী লীগ নতোরা ১৯৭১ সালরে যুদ্ধরে কোন ধরনরে নায়ক ছলিনে না। সে যুদ্ধরে প্রকৃত নায়ক ছলিনে এদশেরে জনগণ। আজকাল অসংখ্য লোকরে নামরে আগে লখো হয় ‘বীর মুক্তযিোদ্ধা’। কন্তিু জনগণরে বীরত্বরে কথা কউে সভোবে বলনে না। এসব থকেে মনে হয়, এদশেে স্বাধীনতা আন্দোলন জনগণ করনেন,ি করছেলিনে পলাতক আওয়ামী লীগ নতেৃবৃন্দ এবং তাদরে সাঙ্গপাঙ্গরা। যারা দশেরে জনগণকে অসহায় অবস্থায় ফলেে ভারতে গযি়ে নজিদেরে জীবন রক্ষা করছেলিনে এবং ভারতরে হাতে দশে স্বাধীন করার দায়ত্বি র্অপণ করে নরিাপদ জীবনযাপন করছেলিনে, তারাই বাংলাদশেরে কথতি প্রকৃত বীর মুক্তযিোদ্ধা! তারাই বাংলাদশেরে পরত্রিাতা!!
ভারতীয় সরকার ও সনোবাহনিীর সহায়তায় ও কল্যাণে এই বীর মুক্তযিোদ্ধা ও পরত্রিাতারা ১৯৭১ সালে ক্ষমতাসীন হয়ছেলিনে। ক্ষমতাসীন হওয়ার পরমুর্হূত থকেইে তারা যভোবে লুটপাট শুর“ করছেলিনে এবং জনগণরে ওপর নর্যিাতন চালযি়ছেলিনে, সটো ইতহিাসরে পাতায় লখো হয়ছে।ে সে ইতহিাসকে চাপা দযি়,ে বকিৃত করে এখন যে মথ্যিা ইতহিাস স্কুল পাঠ্যপুস্তকে র্পযন্ত ঘুণ ধরযি়ছে,ে সে ইতহিাস গ্রাহ্য নয়। সে ইতহিাস ঐতহিাসকিভাবইে র্বজতি হব।ে


যারা এই মথ্যিা ইতহিাস নজি নজি দলীয়, পারবিারকি ও ব্যক্তস্বর্িাথে রচনা করছেনে, তারাই প্রথম থকেে বাংলাদশেরে জনগণরে শোষক-নর্যিাতক। তাদরে উৎপীড়নে বাংলাদশেরে জনগণ আজ র্পযন্ত স্বাধীনতার কোন স্বাদ পানন।ি এ পর¯ি’িততিে স্বাধীনতা থকেে নজিদেরে প্রাপ্তরি হসিাব নযে়ার চন্তিা জনগণরে পক্ষে স্বাভাবকি। দখো যাবে য,ে ১৯৭১ সালরে পর থকেে বাংলাদশেে উৎপাদন বডে়ছে,ে দশেে ধনসম্পদ অনকে বৃদ্ধি পযে়ছে,ে দশেরে কছিু লোক অচন্তিনীয় ধনসম্পদরে অধকিারী হয়ে বলিাসতিায় ভাসছ।ে


কন্তিু যারা বপিুল অধকিাংশ, যারা দশেরে ৯০ শতাংশ, তাদরে জীবন আজ র্দুবষিহ। শুধু যে খাদ্য, বাসস্থান, চকিৎিসা, শক্ষিা ইত্যাদরি অভাবই তাদরে জীবনকে ঘরিে আছে তা-ই নয়; তাদরে ওপর রাজনতৈকি নর্যিাতন আজ এমন র্পযায়ে এসে দাঁড়যি়ছেে যা ১৯৭২-৭৫ সময়রে পর আর দখো যায়ন।ি
জনগণরে জীবনে আজ কোন নরিাপত্তা নইে। ক্রসফায়ারে হত্যা, অপহরণ, গুম-খুন, র্ধষণ, ঘরবাড়,ি জমজিমা থকেে উ”ছেদ, কাজরে অভাব, ছাঁটাই, মূল্যবৃদ্ধ,ি ফসলরে উপযুক্ত দাম না পাওয়া ইত্যাদি জনগণরে জীবনে আজ চরম র্দুদশা ডকেে এনছে।ে এ পর¯ি’িততিে এসবরে বরি“দ্ধে প্রতরিোধ আন্দোলন স্বাভাবকি। এ স্বাভাবকি ব্যাপার যাতে ঘটতে না পারে তার জন্য সরকার এখন জনগণরে কণ্ঠ রোধে তাদরে রাজনতৈকি তৎপরতার বরি“দ্ধে সব রকম সম্ভাব্য পদক্ষপেই গ্রহণ করছ।ে


পরাধীন ব্রটিশি আমলে এবং পরে পাকস্তিানওে জনগণরে যে রাজনতৈকি স্বাধীনতা ছলি, বাংলাদশেে এখন আর তা নইে। সবই সরকার কডে়ে নযি়ছে।ে এখন মটিংি-সমাবশে, মছিলিরে জন্য এমনভাবে পুলশিরে অনুমতরি ব্যবস্থা হয়ছেে যাতে স্বাধীনভাবে কোন রাজনতৈকি র্কমসূচি গ্রহণ প্রায় অসম্ভব হয়ছে।ে ঢাকায় এখন প্রসে ক্লাব ও জাদুঘররে সামনে ছাড়া অন্য কোন জায়গাতইে সভা-সমাবশে করতে দযে়া হ”ছে না এবং এভাবে সভা করতে হলওে সটো রাস্তার ওপর দাঁড়যি়ইে করতে হ”ছে। পল্টন ময়দান, মুক্তাঙ্গন ইত্যাদরি মতো জায়গায় যখোনে আগে সব সময়ই সভা-সমাবশে হতো, সখোনে আজ নষিধোজ্ঞা জারি আছ।ে অথচ মুক্তাঙ্গন তরৈি করার সময় বলা হয়ছেলি, সখোনে কোন সভা-সমাবশেরে জন্য কোন সময়ই কারও অনুমতরি প্রয়োজন হবে না। এখন অনুমতি নযি়ে সভা করা তো দূররে কথা, মুক্তাঙ্গন সভা-সমাবশেরে জন্য নষিদ্ধি এলাকা হসিবেে সরকার ঘোষণা করছে!ে


অনুমতসিাপক্ষেে যসেব সভা হয় সখোনে সভার অনুমতি ছাড়াও পৃথকভাবে মাইক ব্যবহাররে অনুমতি নতিে হয়! অনকে সময় সভার সময় র্পযন্ত বঁেধে দযে়া হয়, এবং অতরিক্তি সময় সভা চললে পুলশি হামলা কর!ে! দযে়াল লখিন সরকার আগইে নষিদ্ধি করছে।ে এখন তারা পোস্টার ও লফিলটে র্পযন্ত নষিদ্ধি করার পাঁয়তারা চালা”ছে। শগিগরিই এ নষিধোজ্ঞা তারা জারি করব!ে!! এ ব্যাপারে তারা আদালতরে ওপরও প্রভাব বস্তিাররে চষ্টো চালায়!!! কাজইে কোথায় আছি আমরা? কোথায় যা”ছি আমরা? এ প্রশ্ন আজ স্বাভাবকি। যে দশেে জনগণরে স্বাধীনতায় এ ধরনরে ফ্যাসস্টি হস্তক্ষপে করা হয়, সে দশেরে জনগণকে স্বাধীন বলার কোন সুযোগ নইে। কাজইে স্বাধীন বাংলাদশেরে মানুষ যে আজ পরাধীন এতে আর সন্দহে কী?
এ পর¯ি’িততিে বাংলাদশেে স্বাধীন কারা, এ প্রশ্ন স্বাভাবকি। আগইে বলা হয়ছে,ে ১৯৭১ সালে যারা পলাতক ছলিনে এবং যুদ্ধে যাদরে সাক্ষাৎ ভূমকিা নগণ্য ছলি বা ছলিই না, তারাই ভারতীয় সরকার ও সনোবাহনিীর সহায়তায় বাংলাদশেরে শাসন ক্ষমতায় অধষ্ঠিতি হয়ছেলিনে। তারাই আজ ফুল-েফঁেপে এ দশেে শোষণ-নর্যিাতনরে জাল বস্তিার করে আছনে। সাম্রাজ্যবাদরে কাছে দশেরে স্বাধীনতা বক্রিি করতওে তাদরে অসুবধিা হ”ছে না। না হওয়ারই কথা, কারণ এই স্বাধীনতা র্অজনে যাদরে কোন প্রকৃত ভূমকিা ছলি না তাদরে ও তাদরে বংশধরদরে বাংলাদশেরে প্রতি কোন প্রমে, ভালোবাসা এবং জনগণরে জন্য দরদ ও র্কতব্যবোধ থাকার কথা নয়। সটো নইেও।
আসলে সাম্রাজ্যবাদীরাই শুধু নয়, এদশেীয় শোষক-শাসকরাও বাংলাদশেরে জনগণরে জীবনে এক ধরনরে বহরিাগত। এরা জনগণরে কউে নয়। এ কারণইে জনগণরে জন্য এদরে করণীয় কছিু নইে। কন্তিু এরাই শাসন ক্ষমতায় অধষ্ঠিতি। এদরে শাসন যতদনি র্পযন্ত উ”ছেদ না হ”ছে ততদনি র্পযন্ত জনগণরে উপরোক্ত জজ্ঞিাসা থকেইে যাব।ে বদ্যিমান শোষক-শাসকদরে ক্ষমতার অবসান ছাড়া এই জজ্ঞিাসার অবসান সম্ভব নয়।
৫.৫.২০১২

বৃহস্পতিবার, ৩ মে, ২০১২

কিসের সমুদ্র জয়?



ব দ রু দ্দী ন উ ম র
২৮ এপ্রিল জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় আওয়ামী লীগ ও তাদের সরকারের উদ্যোগে শেখ হাসিনার ‘বঙ্গোপসাগর জয়’ উপলক্ষে তাকে এক জৌলুসপূর্ণ সংবর্ধনা দেয়া হয়। বঙ্গোপসাগরে জলসীমা নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটা মতপার্থক্য বা বিবাদ বেশ কিছুদিন ধরেই ছিল। মাছ ধরা ও সাগরের তলদেশে তেল-গ্যাসসহ খনিজ সম্পদের ওপর অধিকার নিয়ে এই বিবাদের মীমাংসার জন্য আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালে মামলা দায়ের করেছিল। যে কোনো সরকারকেই বর্তমান অবস্থায় এই মামলা বাধ্য হয়েই দায়ের করতে হতো। কারণ এই বিবাদ নিষ্পত্তি ছাড়া কোনো ব্লকই আইনসিদ্ধভাবে বরাদ্দ করা সম্ভব হচ্ছিল না। এই মামলার রায়টি এমন যাতে বাংলাদেশ ও মিয়মানমার উভয় সরকারই সন্তোষ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ একে আখ্যায়িত করেছে সমুদ্র জয় হিসেবে। উপকূলবর্তী দেশগুলোর সমুদ্রসীমা নির্ধারণের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন আছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দাবির যথার্থতা বিচার করে এই আইন অনুযায়ীই ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছেন। কাজেই এই রায় দ্বারা কোনো দেশের জয় হওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। এ প্রশ্ন যে ওঠে না এটা মিয়ানমার সরকার কর্তৃক এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করা থেকেও বোঝা যায়। কিন্তু ব্যাপারটা এরকম হওয়া সত্ত্বেও এই রায়কে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব বিজয় আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ ও তাদের সরকার এক হুলুস্থুল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
বঙ্গোপসাগরের সীমা নির্ধারণ নিয়ে মামলার নিষ্পত্তি এইভাবে হওয়ায় মিয়ানমার সন্তোষ প্রকাশ করলেও তারা এ নিয়ে কোনো হুলুস্থুল করছে না। কিন্তু বাংলাদেশে সেটা হচ্ছে। এর থেকে অন্য যাই হোক, দুই দেশের শাসক শ্রেণীর ও তাদের সরকারি নেতৃত্বের সাংস্কৃতিক মানের একটা পরিচয় পাওয়া যায়। মিয়ানমারের নেতৃত্বের সাংস্কৃতিক মান বাংলাদেশের নেতৃত্বের সাংস্কৃতিক মান থেকে অনেক উঁচু হওয়ায় রায় নিয়ে লাফালাফির কোনো মানসিকতা তাদের নেই। বিষয়টিকে তারা সহজভাবেই নিয়েছে, যেমনভাবে তা নেয়া দরকার। মিয়ানমার বাংলাদেশ থেকে কোনো দুর্বল দেশ নয়। আকারে এবং খনিজ সম্পদসহ নানা সম্পদে তারা বাংলাদেশের থেকে অনেক বড় ও সমৃদ্ধ। দীর্ঘদিন সেখানে সামরিক শাসন বলবত্ থাকলেও সাধারণ সাংস্কৃতিক মানের উচ্চতার কারণে লাফালাফি ও দম্ভ প্রকাশের প্রবণতা তাদের সামরিক বাহিনীরও নেই। এর জন্য কোনো বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠী প্রতিপালনের প্রয়োজনও তাদের হয় না।
এদিক দিয়ে বাংলাদেশ এক বিচিত্র দেশ। শুধু ‘সমুদ্র জয়’ নিয়ে নয়, বাংলাদেশের শাসক শ্রেণী ও তাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সব ক্ষেত্রেই আজ যে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, তার মূলে আছে সাংস্কৃতিক মানের এই ভয়াবহ নিম্নতা। দৃষ্টিকে একটু গভীর করলে দেখা যাবে লুটতরাজ, চুরি, দুর্নীতি, প্রতারণা, সন্ত্রাস এবং বর্তমানে সৃষ্ট অরাজকতা—সবকিছুই এই সাংস্কৃতিক অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত। এদিক দিয়ে উনিশ ও বিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে বর্তমান বাংলাদেশের সংস্কৃতির আকাশপাতাল পার্থক্য। কীভাবে এই পার্থক্য তৈরি হলো তার সুনির্দিষ্ট কারণ আছে, যা নিয়ে আলোচনার সুযোগ এখানে নেই।
‘সমুদ্র জয়’-এর কথা যখন উঠেছে তখন এ নিয়ে কিছু কথা বলা দরকার। সমুদ্রযুদ্ধে বাংলাদেশের জয় অর্থাত্ তার সীমানা নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত হওয়ায় আসল লাভ হয়েছে সাম্রাজ্যবাদীদের, আমেরিকানদের। তেল কোম্পানি তাল্লো এবং কনোকো ফিলিপসকে বাংলাদেশ গ্যাস উত্তোলনের ইজারা দিয়েছে। কিন্তু জলসীমা নিয়ে বিবাদ থাকায় বাংলাদেশের এ কাজ আইনসিদ্ধ ছিল না। এখন সীমানা চিহ্নিত হওয়ার ফলে বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে ইজারাপ্রাপ্ত তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলো পরম নিশ্চিন্তে গ্যাস উত্তোলনের কাজ এগিয়ে নিতে পারবে।
আমেরিকানদের সমুদ্রে গ্যাস উত্তোলনের সুবিধা যে দেয়া হবে এটা আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা বিগত নির্বাচনের আগেই জানিয়েছেন। সেই অনুযায়ী বঙ্গোপসাগরে তাল্লো এবং কনোকো ফিলিপস ইজারা পেয়েছে। শুধু এই একটি ব্লকই নয়, অন্য ব্লকগুলোর ইজারাও এভাবেই একাধিক আমেরিকান কোম্পানিকে যে দেয়া হবে—এটা প্রায় নিশ্চিত ব্যাপার। কাজেই বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে যদি কারও জয় হয়ে থাকে তাহলে সে জয় আমেরিকার, তাদের তেল কোম্পানিগুলোর। একই সঙ্গে তাদের মত্স্য ব্যবসায়ী ইত্যাদির। তারাই প্রকৃতপক্ষে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমার ওপর নিজেদের আধিপত্য কায়েম রেখে পাহাড়প্রমাণ মুনাফা অর্জন করবে, বাংলাদেশের হাতে কিছু গুঁজে দিয়ে। অর্থাত্ বঙ্গোপসাগরে তারা বাংলাদেশের হাতে তামাক খাবে।
বঙ্গোপসাগরে ব্লক ইজারা দেয়া সত্ত্বেও তার কোনো আইনগত ভিত্তি আগে ছিল না। এখন তা তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রে বিবাদ নিষ্পত্তির কাজটি করেছে বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের সমুদ্র ডেস্ক। এ কাজ করতে গিয়ে কারও ওকালতির কোনো প্রয়োজন হয়নি। সুনির্দিষ্ট আইন অনুযায়ীই এটা হয়েছে। এতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর কোনো কৃতিত্ব নেই। সমুদ্রে গ্যাস কোম্পানিগুলোর ইজারা কার্যকর করার তাগিদই এক্ষেত্রে কাজ করেছে। বাংলাদেশের যে কোনো সরকারকেই এই পরিস্থিতিতে এটা করতে হতো। এখন এর ফলে ইজারা থেকে শত শত কোটি আইনি-বেআইনি ডলার লেনদেন হবে। আওয়ামী লীগের আগামী নির্বাচনের খরচও এর থেকে তোলার ব্যবস্থা হবে। আওয়ামী লীগের সমুদ্র বিজয় উত্সবের এটাই হলো মূল কারণ।
সমুদ্র বিজয় উপলক্ষে আওয়ামী লীগ তাদের দল ও সরকারের নেত্রীকে সংবর্ধনা দেয়ার মাধ্যমে যে কৃতিত্ব তাকে দেয়ার চেষ্টা করেছে, সে কৃতিত্বের কানাকড়িও তার পাওনা নয়। যারা এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল তারা জানেন যে, এ ধরনের সীমানা নির্ধারণ এই প্রথম নয়। এটা এক প্রচলিত ব্যাপার। কিন্তু এর আগে কোনো দেশকেই একে সমুদ্র জয় হিসেবে আখ্যায়িত করে বিজয় উত্সব পালন করতে দেখা যায়নি। যা অন্য কোনো দেশে এই অবস্থায় দেখা যায়নি, এই বিচিত্র বাংলাদেশে সেটাই কাড়া নাকাড়া বাজিয়ে জনগণকে দেখানো হলো!!
২৮ এপ্রিল সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এক বিরাট মঞ্চ তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনার আয়োজন হলো। আওয়ামী লীগের দ্বারা আয়োজিত এই সংবর্ধনা উপলক্ষে মঞ্চে বেশ কয়েকজন অদ্ভুত বুদ্ধিজীবীর উপস্থিতি দেখা গেল। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের খুঁটিতে বাঁধা কয়েকজন বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে নবাগত কয়েকজনও মঞ্চ আলোকিত করেছিলেন। দেশে সুবিধাবাদ এবং বুদ্ধিজীবীদের চরিত্রহীনতা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে—এটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর মতোই ব্যাপার।
খুঁটিতে বাঁধা আওয়ামী বুদ্ধিজীবী সৈয়দ শামসুল হক (যিনি অনেক আগে আওয়ামী লীগের এক সমাবেশে হাসিনাকে ‘দেশরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন এবং যিনি নিজের উদ্যোগেই নিজের নামের আগে ‘সব্যসাচী’ লেখার প্রচলন করেছেন) অভিজ্ঞানপত্র নামে একটি চতুর্থ শ্রেণীর রচনা পাঠ করার মধ্য দিয়েই সংবর্ধনা সভার কাজ শুরু হয়। তার পরই শুরু হয় অন্য বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা হাসিনার প্রশস্তি কীর্তন। নাগরিক সংবর্ধনা কমিটির সভাপতি জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, তারা হাসিনার মতো নেতা পেয়ে নিজেদের ধন্য মনে করেন। তিনি আরও অনেকদিন দেশে ক্ষমতার হাল ধরে রেখে জনগণের ও দেশের জন্য কাজ করতে পারবেন, এই আশা তিনি ব্যক্ত করেন। চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী উপস্থিত শ্রোতৃমণ্ডলী ও জনগণের কাছে আকুল আবেদন জানান যাতে তারা শেখ হাসিনার মতো দেশনেত্রীকে আরও অন্তত দুই টার্ম ক্ষমতায় রেখে বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ভোট দেন!!! অন্য চামচাদের কথাবার্তাও ছিল একই রকম যার বিস্তারিত উল্লেখের প্রয়োজন নেই। এই সংবর্ধনা থেকে স্পষ্টই বোঝা গেল যে, বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য যে সঙ্কটজনক পরিস্থিতি তৈরি তারা নিজেরাই করেছে, সে সঙ্কট থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দেয়া এবং নির্বাচনে ভোটের বাক্স ভর্তি করাই ছিল এই সংবর্ধনার মূল উদ্দেশ্য।
এই সংবর্ধনার আয়োজন যে শেখ হাসিনার নিজের উদ্যোগেই এবং চামচাদের উত্সাহে হয়েছে, এতে সন্দেহ নেই। একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী যে কতখানি নির্লজ্জ এবং আত্মসম্মানহীন আচরণ করতে পারেন, এটা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সংবর্ধনার মাধ্যমে শুধু দেশের লোককেই নয়, দুনিয়ার লোককেও দেখিয়ে দিয়েছেন। এই সঙ্গে নিজেকে বর্ণনাতীতভাবে হাস্যস্পদ করেছেন।
২.৫.২০১২