শনিবার, ১৯ মে, ২০১২

বেসরকারি প্রাথমিক শি¶কদের অনশন




ব দ র“ দ্দী ন উ ম র
রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শি¶করা ১৭ মে তাদের চার দিনের কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেছেন। এই সঙ্গে তারা ঘোষণা করেছেন তাদের পরবর্তী কর্মসূচি। আগামী ৩১ মে’র মধ্যে তাদের প্রধান দাবি বেসরকারি স্কুলগুলোর জাতীয়করণ যদি না করা হয়, তাহলে ১৬ জুন থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অর্থাৎ তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যš— তারা দেশের ২৪ হাজার স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দেবেন। এই ধর্মঘট কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন প্রায় ১ লাখ শি¶ক।
২০০৮ সালে নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল যে, তারা ¶মতায় গেলে বেসরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলো জাতীয়করণ করবে। কার্য¶েত্রে যাই হোক, প্রতিশ্র“তির ব্যাপারে আওয়ামী লীগ যে অসাধারণ উদার এটা সবারই জানা। বিগত নির্বাচনে বেসরকারি প্রাথমিক স্কুলের শি¶কদের দেয়া প্রতিশ্র“তি তারা আজ পর্যš— র¶া করেনি। শুধু তাই নয়, এ নিয়ে কোন আগ্রহই তাদের এখন নেই। উপরন্তু এই জাতীয়করণের তারা ঘোর বিরোধী। কিন্তু কার্য¶েত্রে বিরোধিতা সত্তে¡ও এ ব্যাপারে তাদের আশ্বাসের কমতি নেই। আশ্বাস দেয়ার ব্যাপারে তারা প্রতিশ্র“তি দেয়ার মতোই উদার!
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল, এমনকি প্রত্যš— অঞ্চল থেকে হাজার হাজার প্রাথমিক স্কুল শি¶ক ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান গ্রহণ করে নিজেদের দাবি জানাতে থাকলেও সরকারি কর্তৃপ¶ সেটা ভ্রƒ¶েপ করার প্রয়োজন মনে করেনি। শি¶কদের একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার দাবি জানালেও তাতে কাজ হয়নি। তবে একজন প্রতিমন্ত্রীর অফিসে তাদের সঙ্গে আলোচনার সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের সা¶াতের ‘আশ্বাস’ দেন। কিন্তু কোন সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা সে ¶েত্রে না হওয়ায় শুধু এ ধরনের আশ্বাসের ওপর আস্থা না রেখে আন্দোলনকারী শি¶করা নিজেদের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধাš— নেন। মন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের ওপর শি¶কদের আস্থা না থাকা যুক্তিসঙ্গত। কারণ এ¶েত্রে তারা ২০০৮ সালে দেয়া নির্বাচনী প্রতিশ্র“তি র¶া করেননি এবং পরে ২০১০ সালের জুলাই মাসের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের বেতন বৈষম্য দূর করার যে প্রতিশ্র“তি ঘোষণা করেছিলেন, সে অনুযায়ী কিছু কাজ হয়নি। বেসরকারি স্কুল শি¶কদের অবস্থা অপরিবর্তিত আছে।
গত ২১ থেকে ২৭ ডিসেম্বর প্রাথমিক শি¶করা এই সরকারের আমলে প্রথমবার শহীদ মিনারে অবস্থান গ্রহণ করে একই দাবিতে অনশন পর্যš— করেন। তারা গায়ে কেরোসিন দিয়ে আÍাহুতির কর্মসূচিও ঘোষণা করেন। সরকারের আশ্বাসের ভিত্তিতে তা প্রত্যাহার করা হলেও সরকার এ পর্যš— কিছুই করেনি! কাজেই তাদের দ্বিতীয় দফায় এ আন্দোলন আবার করতে হচ্ছে। এই আন্দোলন চলাকালে শি¶করা ১৫ মে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেয়ার উদ্দেশে মিছিল বের করেন। মিছিল শাহবাগের কাছে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে পৌঁছলে পুলিশের সঙ্গে শি¶কদের সংঘর্ষ হয়। মিছিলকারীদের গতি রোধ করার জন্য পুলিশ জলকামান থেকে তাদের ওপর গরম পানি ছোড়ে এবং পরে লাঠিচার্জ করে। প্রবীণ শি¶করাও মারধরের শিকার হন। পুলিশের এই হামলায় জামালপুরের এক স্কুলের প্রবীণ শি¶ক আজিজুর রহমান আহত হন এবং পরে হাসপাতালে মারা যান।
রেজিস্টার্ড বেসরকারি স্কুল জাতীয়করণের দাবি নতুন নয়। আগের কথা বাদ দিলেও ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিটি নির্বাচিত সরকারের কাছে এই শি¶করা তাদের স্কুল জাতীয়করণের এবং সরকারি ও বেসরকারি স্কুল শি¶কদের বেতন বৈষম্য দূর করার দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু কোন সরকারের আমলেই আজ পর্যš— এ দুই দাবির কোনটিরই বা¯—বায়ন হয়নি। কাজেই দ্বিতীয় দফা আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণার সময় তারা বাধ্য হয়ে আবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
প্রাথমিক স্কুলের এই শি¶করা গরিব ছাত্রদের শি¶ক। গরিবদের চিকিৎসার ¶েত্র যেমন, তাদের শি¶া¶েত্রেও তেমনি সরকারের কোন দায়িত্ব আছে বলে মনে হয় না। এই শি¶কদের বেতন এত কম যে, তাতে পরিবার-পরিজনসহ জীবনধারণ করা যে কোন লোকের প¶েই কষ্টকর। এ অবস্থায় প্রাথমিক শি¶কদের আÍহত্যার ঘটনাও বিরল নয়। সুস্থ শরীর এবং মোটামুটি দুশ্চিš—ামুক্ত না হলে যে শি¶কদের দ্বারা ছাত্রদের পাঠদান ঠিকমতো হওয়া সম্ভব নয়, এটা বলাই বাহুল্য। কিন্তু ঠিকমতো পাঠদান তো দূরের কথা, অনেক সময় শি¶করা স্কুলে উপস্থিত থাকতেও পারেন না। কারণ স্কুলবেতন থেকে তারা যা পান তার অতিরিক্ত আয় তাদের করতে হয় অন্য কাজ করে এবং সে কাজের জন্যও সময় দিতে হয়। এই পরিস্থিতিতে নিচের স্কুলগুলোতে ছাত্ররা উপযুক্ত শি¶া লাভ থেকে বঞ্চিত হয়। এই ছাত্ররা উপরের ক্লাসে উঠেও এ জন্য আর ভালো করতে পারে না। এসএসসি পরী¶ার সময় প্রত্যেক বছরই দেখা যায়, এই স্কুলগুলোর ফলাফল খুব খারাপ হয়। অনেক স্কুলে পরী¶ায় সব ছাত্রই ফেল করে! বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে বেসরকারি স্কুলগুলোর যে অবস্থা তাতে এটাই ¯^াভাবিক। এগুলোতে শুধু যে শি¶করা উপযুক্ত বেতনের অভাবে তাদের শি¶াদান অনেক ¶েত্রে ঠিকমতো করতে পারেন না তাই নয়, এই স্কুলগুলোর বাড়িঘর বলেও কিছু থাকে না। ভাঙাচোরা ঘরে ক্লাস হয়। সেখানে চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চ, ব­াকবোর্ড, বইপত্র কিছুরই ঠিক থাকে না। সরকারি মন্ত্রী থেকে নিয়ে বড় কর্তারা ‘ছাত্ররাই দেশের ভবিষ্যৎ’, ‘দেশের মের“দÊ’ ইত্যাদি অনেক বড় বড় কথা বললেও তাদের মের“দÊ সরকারের বৈষম্যমূলক নীতির কারণেই ভেঙে পড়ে। 
আগামী ৩১ মে’র মধ্যে সরকার প্রাথমিক শি¶কদের দাবি মেনে নিয়ে রেজিস্টার্ড বেসরকারি স্কুল জাতীয়করণ এবং সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের বেতন বৈষম্য দূর করবেÑ এটা ভাবার কোন বা¯—বসম্মত কারণ নেই। এ কারণে যে, এই সরকার গরিবদের ভোটে নির্বাচিত হলেও এবং ভাঁওতাবাজি করে গরিবদের অনেক রকম প্রতিশ্র“তি এবং আশ্বাস দিয়ে এলেও, এরা গরিবদের কোন প্রতিনিধি নয়। এদের শাসনের অধীনে চোর, দুর্নীতিবাজ, ডাকাত, প্রতারক এবং লুণ্ঠনজীবীরাই সম্পদের পাহাড় বানাচ্ছে। অন্যদিকে এই প্রক্রিয়ায় গরিবদের জীবন বেশি করে বিধ্ব¯— ও ধ্বংস হচ্ছে। 
এ অবস্থায় শি¶কদের আন্দোলন যেভাবে হওয়া দরকার, সেভাবে না হওয়ার কারণেই বারবার আন্দোলন সত্তে¡ও তাদের কোন সাফল্য আসে না। আন্দোলনের একপর্যায়ে তারা সরকারি আশ্বাস ইত্যাদির কারণে আন্দোলন বন্ধ করেন। কাজেই দাবি না মানা পর্যš— অনমনীয়ভাবে আন্দোলন চালিয়ে গেলে যে ফল পাওয়ার কথা সে ফল তারা পান না। 
চাকরি যাওয়া এবং অন্যান্য ভয়ের কারণে শি¶করা একটা পর্যায়ের বেশি আন্দোলন চালিয়ে যেতে অ¶ম হওয়ার কারণেই তারা ধনিক শ্রেণীর সরকারের কাছে পরাজিত হন। এ¶েত্রে শি¶ক নেতৃত্বের দুর্বলতাও ল¶ণীয়। এসব দুর্বলতা কাটিয়ে উঠে, শক্তভাবে দাঁড়িয়ে, ১৬ জুন থেকে সব সরকারি শত্র“তার মুখে দাঁড়িয়ে তারা যদি অবিচলিত ও দৃঢ়ভাবে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারেন, একমাত্র সে ¶েত্রেই তাদের আন্দোলনে সাফল্য আসতে পারে। অন্যথায় তাদের আন্দোলনের পরিণতি আগে যা হয়েছে তার থেকে ভিন্ন হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। 
১৯.০৫.১২

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন