ব দ র“ দ্দী ন উ ম র
অর্থমন্ত্রী বেশ গরম মেজাজে জাতীয় সংসদে ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছেন। এমনিতেই অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি নানা ধরনের অর্থহীন বক্তব্য প্রদান করতে অভ্যস্ত। এসব কথা শুনে মনে হয় না দিগি¦দিক জ্ঞান বলে তার কিছু আছে। গরম অব¯’ায় উত্তেজিতভাবে শেয়ারবাজার সম্পর্কে তিনি যা বলেছেন তা অর্থহীন এবং বিস্ময়করই বটে। তিনি পুুঁজিবাজারকে ‘দুষ্টু শেয়ারবাজার’ বলে আখ্যায়িত করে বলেছেন, ‘এ বাজারের কথা না ভাবলেও অর্থনীতির কোন ক্ষতি হবে না!’ পুঁজির কারবার যেখানে থাকে সেখানে দুষ্টু ব্যাপারও থাকে। কিš‘ একটি পুঁজিবাদী অর্থ ব্যব¯’ায় শেয়ারবাজার সম্পর্কে এ ধরনের বক্তব্য শুধু অর্থমন্ত্রী নন, কোন শিক্ষিত লোকের পক্ষে দেয়া যে সম্ভব এটা ভাবনার অতীত। কিš‘ যে কথা স্বাভাবিকভাবে ভাবনার অতীত সে কথাই অর্থমন্ত্রী তার গরম বাজেট বক্তৃতায় উদগিরণ করেছেন। এর মধ্যে আর যা-ই হোক, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের এবং বিশেষত অর্থমন্ত্রীর চরম ব্যর্থতার প্রতিফলন ছাড়া আর কী আছে? স্বাভাবিকভাবেই মন্ত্রীর এ বক্তব্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) নিজেদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। ডিএসই সভাপতি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘সরকার ডিএসই থেকে গত তিন বছরে এক হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব পেয়েছে। পুঁজিবাজার হল বিকল্প অর্থ সংগ্রহের জায়গা। ভারত
সরকার পুঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তোলন করে
পিপিপির আওতায় বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। (সকালের খবর, ১৩.৬.১২)
ভারতের কোন অর্থমন্ত্রী পার্লামেন্টে বাজেট পেশ করার সময় এ ধরনের উক্তি করলে তাকে পার্লামেন্টেই রীতিমতো বিপদে পড়তে হতো। কারণ এ কথা নির্বোধ এবং নিজেদের সাধের পুঁজিবাদের চরিত্র সম্পর্কেও প্রকৃতপক্ষে অজ্ঞ এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ অক্ষম, এমন একজন লোকের পক্ষেই বলা সম্ভব। কিš‘ বাংলাদেশের সংসদে অর্থমন্ত্রীর সে রকম কোন বিপদ হয়নি! আমলা মহল থেকে এসে এই অর্থমন্ত্রী রাজনীতিবিদ হয়েছেন। রাজনীতিবিদ হিসেবেও তিনি অনেক ঘাটের পানি খাওয়া এক চরম সুবিধাবাদী লোক। ভুলে যাওয়ার উপায় নেই যে, অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলেও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করে কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন। এখন আওয়ামী লীগের অর্থমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতামদমত্ত অব¯’ায় তার মেজাজ গরম। এই গরম অব¯’ায় বাজেট পেশ করলে বাজেটের যে অব¯’া হয় এই বাজেটের অব¯’াও তা-ই হয়েছে। এতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তার অর্থায়নের যেসব কাল্পনিক বা আয়ত্তবহির্ভূত উৎসের কথা বলা হয়েছে তাতে এই বাজেট দেশকে অদূর ভবিষ্যতেই যে চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে নিক্ষেপ করবে এতে সন্দেহ নেই। অর্থমন্ত্রী তার বাজেটে ৭ দশমিক ৫ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা বলেছেন। কিš‘ এর কোন সম্ভাবনা যে তার টালমাটাল বাজেটের মধ্যে নেই তা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তিনি বাহাদুরি দেখানোর জন্য এক বিরাট অংকের বাজেট পেশ করলেও এমন সব অনিশ্চয়তার মধ্যে তার ‘সাফল্যকে’ দাঁড় করিয়েছেন যার ফলে শেষ পর্যন্ত তার বাজেটের অব¯’া লেজেগোবরে হওয়ার কথা। মূল্যবৃদ্ধি রোধ ও নিয়ন্ত্রণ হল এ ধরনেরই এক অনিশ্চয়তা। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের কোন ব্যব¯’া তার বাজেটে নেই। যা আছে তা হল, এক ধরনের ফাঁকা আশাবাদ। সংসদে বসে থাকা তার সহযোদ্ধা এবং তাদের আÍীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও দুর্নীতির ভাগীদাররাই যে তার এই ফাঁকা আশাবাদের মাথা মুড়িয়ে ঘোল ঢালবেন এতে সন্দেহ নেই। আমার এ কথা ‘অসংসদীয়’ হলেও এটা এক নির্জলা সত্য। এ সত্য বর্তমান সরকারের ঊর্ধ্বতন থেকে নিুতম পর্যায়ের নেতারা এরই মধ্যে প্রমাণ করেছেন। শেয়ারবাজার সম্পর্কে নিজের অক্ষমতা-হতাশা প্রকাশ করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘আই অ্যাম একদম ফেডআপ!’ তার এই ইঙ্গ-বঙ্গ ভাষা আমাদের মনে করিয়ে দেয় বিগত বিএনপি সরকারের কুখ্যাত স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরের ‘উই আর লুকিং ফর শত্র“জ’-এর কথা। অর্থমন্ত্রী ও তার বাজেটের অব¯’া দেখে মনে হয় কিছুদিন পর তিনি মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গেও বলবেন, ‘আই অ্যাম একদম ফেডআপ’ এবং মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে না ভাবলেও অর্থনীতির কোন ক্ষতি নেই, বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কোন অসুবিধা নেই!
আমি বর্তমান সরকারের বাজেটের যে সমালোচনা এখানে করছি ও যেভাবে করছি এটা লব্ধপ্রতিষ্ঠ অর্থনীতিবিদ, সিভিল সোসাইটির হƒষ্টপুষ্ট ভদ্রলোক, শিল্প ব্যবসায়ী শ্রেণীর নেতৃবৃন্দ প্রভৃতির দৃষ্টিতে ঁহড়ৎঃযড়ফড়ী বা গতানুগতিক বাজেট আলোচনার স্টাইলবহির্ভূত। এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ এটা করা হ”েছ সম্পূর্ণ অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে, অন্য দৃষ্টিভঙ্গিতে। এ প্রসঙ্গে প্রথমেই বলা দরকার যে, সংসদে বাজেট পেশ করার পর উপরোক্ত গণ্যমান্য ব্যক্তি, সমাজপতি, অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার প্রভৃতিরা যে সমালোচনা করেন, সেটা তারা করে থাকেন শতভাগ পুঁজিবাদী হিসেবে। পুঁজিবাদী ব্যব¯’া অটুট রাখা ও তা আরও সুসংহত করার লক্ষ্য সামনে রেখেই তারা অর্থমন্ত্রীর নানা বাজেট প্রস্তাবে বন্ধুপ্রতিম সমালোচনা করে থাকেন। সে ধরনের সমালোচনার মধ্যে যাওয়ার প্রয়োজন আমাদের নেই।
অর্থমন্ত্রীর বাজেটে দরিদ্র শ্রমজীবী জনগণের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধির সব রকম ব্যব¯’াই রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই উল্লেখ করা যেতে পারে মূল্যবৃদ্ধি ও মজুরি অপরিবর্তিত রাখার কথা। প্রথমত, বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পা”েছ। বাজেটে কর্মসং¯’ানের যে কথা বলা হয়েছে তার বেশিটাই ভুয়া। কাগজে-কলমে কর্মসং¯’ান বৃদ্ধির যে কথা বলা হয়েছে তার সঙ্গে বাস্তবতার কোন সম্পর্ক নেই। তাছাড়া এই কর্মসং¯’ানের অধিকাংশই ¯’ায়ী নয়, সাময়িক। বছরের বেশি সময়টাই এই ‘কর্মরত’ শ্রমিকরা বেকার থাকতে বাধ্য হন। দ্বিতীয়ত, যারা মোটামুটি ¯’ায়ী শ্রমিক হিসেবে কল-কারখানায় কাজ করেন তাদের মজুরি বাজারদরের পরিপ্রেক্ষিতে অতি সামান্য। ঘর ভাড়া, খাওয়া ইত্যাদির খরচও এই মজুরি দিয়ে চালানো যায় না। এ পরি¯ি’তিতে তাদের সন্তানদের শিক্ষার কোন ব্যব¯’া নেই। মজুরি নির্ধারণের সময় শিক্ষা, চিকিৎসা খাতে যা প্রয়োজন সেটা থাকে বিবেচনার বাইরে। যারা এখন মাসে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা মজুরি পান তারা ঘর ভাড়া, খাওয়ার খরচ দিয়ে সন্তানদের শিক্ষা ও নিজেদের পরিবারের চিকিৎসা ব্যয় কীভাবে মেটাবেন তার কোন ব্যব¯’া বাজেটে নেই। এরা ধরেই নিয়েছেন, এদের শিক্ষা ও চিকিৎসার কোন প্রয়োজন নেই!
দেশে স্কুলের সংখ্যা বৃদ্ধির কথা বাজেটে রাখা হয়েছে। কিš‘ বাস্তবত দেখা যাবে যে, এ সংখ্যা বৃদ্ধি সত্ত্বেও স্কুলগুলোতে শিক্ষার তেমন কোন ব্যব¯’া নেই। স্কুলের ঘরবাড়ি নির্মাণের একটা ফিরিস্তও এতে দেয়া হয়েছে, কিš‘ দেখা যাবে এর অধিকাংশই প্রকৃতপক্ষে ভুয়া ব্যাপার। শুধু তাই নয়, প্রাথমিক-মাধ্যমিক শিক্ষকদের বেতনের পরিমাণ যা, তাতে তাদের পক্ষে সু¯’ ও নিশ্চিত হয়ে ছাত্রদের শিক্ষা দেয়া সম্ভব নয়। এ জন্য শিক্ষকরা দফায় দফায় আন্দোলন করেও কতগুলো মিথ্যা প্রতিশ্র“তি ছাড়া সরকারের কাছ থেকে কিছুই পাননি। তাদের জন্য এ বাজেটে কোন সং¯’ানও নেই। ঝরে পড়া ছাত্রদের আটকে রাখার জন্য স্কুলে থাকা অব¯’ায় খাওয়ার যে ব্যব¯’ার কথা বলা হয়েছে তা কতখানি কার্যকর সেটা দেখার কেউ নেই। কাজেই এ কর্মসূচির ক্ষেত্রে খাজনার থেকে বাজনা অনেক বেশি। চুরি, দুর্নীতি এ ক্ষেত্রে কারা করে সেটা দেশের লোকের অজানা নয়। প্রত্যেক বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ এখানে নেই, কিš‘ একটি বিষয়ের উল্লেখ অবশ্যই করা দরকার। কারণ, শিক্ষা বিষয়ে সরকারের এবং তার অর্থমন্ত্রীর শিক্ষা সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় এর মধ্যে ভালোভাবেই পাওয়া যায়। মন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলছেন, ‘আমরা বিশেষ গুর“ত্ব দি”িছ বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার প্রসারের ওপর, আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানি উপযোগী দক্ষ জনশক্তি তৈরির ওপর।’ যে কোন দেশ থেকে লোক অন্য দেশের শ্রমবাজারে প্রবেশ করতে পারে। এর মূল কারণ দেশে উপযুক্ত বা কোন ধরনের কর্মসং¯’ান না থাকা। কিš‘ এ প্রক্রিয়াকে শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত করে তাকে ‘বিশেষ গুর“ত্ব’ দেয়ার ব্যাপার বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোন দেশে আছে বলে জানা নেই। রফতানির উদ্দেশ্যে শিক্ষা ব্যব¯’া!! এর থেকে আজগুবি শিক্ষানীতি আর কী হতে পারে? বাজেটে কর্মসং¯’ান সৃষ্টির ওপর অনেক লম্বা-চওড়া কথা বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে এ কর্মসং¯’ান বৃদ্ধি আসলে দেশের থেকে বিদেশেই বেশি হয়েছে। বিদেশে কর্মরত এ শ্রমিকরাই বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রায় বছরে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের জোগান দিয়ে থাকেন! এদের অধিকাংশই অদক্ষ শ্রমিক। এর সঙ্গে আরও বেশিসংখ্যক দক্ষ শ্রমিককে বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনই বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীর বাজেটে শিক্ষা ক্ষেত্রে অতি গুর“ত্বপূর্ণ ¯’ান অধিকার করে আছে।
বাংলাদেশে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার সময়ে দেখা যায়, রাজধানী ঢাকাসহ কয়েকটি বড় শহরের কিছু ব্যয়বহুল স্কুলের ছেলেমেয়েরাই পরীক্ষায় সব সময় ভালো ফল করে। পত্রপত্রিকায় এ ভালো ফল অর্জনকারী ছাত্রছাত্রীদের লাফালাফির ছবি প্রত্যেক বছরেই দেখা যায়। যে সব স্কুলে শতভাগ ছাত্র পরীক্ষা পাস করে সেগুলো এ ধরনেরই স্কুল। যে সব স্কুলে পরীক্ষার ফল খুব খারাপ হয় এবং শতভাগ ছাত্র ফেল করে সেগুলো গ্রামাঞ্চলে অব¯ি’ত। গরিবদের সন্তানরাই সেগুলোতে পড়াশোনা করে। এর থেকেই বোঝা যায় বাংলাদেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যব¯’ার শ্রেণীচরিত্র কতখানি প্রকট। শিক্ষাসুবিধা যেটুকু আছে তার প্রায় সবটাই ভোগ করে থাকে মধ্যবিত্ত, উ”চমধ্যবিত্ত ও ধনিক পরিবারের সন্তানেরা। এর কোন পরিবর্তনের ব্যব¯’া বাজেটে নেই। শিক্ষা সংস্কার বিষয়ে অনেক কথা বলা হলেও তা এ ক্ষেত্রে একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে পরি¯ি’তি আরও ভয়াবহ। কাগজে-কলমে ও মন্ত্রীর বাজেটে স্বা¯’্যসেবা বিষয়ে অনেক গালভরা কথা থাকলেও এবং এগুলোর সংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে অনেক কথা বলা হলেও আসলে সারা বাংলাদেশে গরিবদের এবং অল্প আয়ের লোকদের চিকিৎসার কোন ব্যব¯’া নেই বললেই চলে। গ্রামাঞ্চলের স্বা¯’্য কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসকরা নিয়মিত উপ¯ি’ত থাকেন না। ওষুধপত্র কিছুই পাওয়া যায় না। একমাত্র ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া চিকিৎসার জন্য যা কিছু প্রয়োজন তার সব কিছুর জন্যই টাকা দিতে হয়। শুধু যে গ্রামাঞ্চল ও মফস্বল শহরের কথা তা নয়, ঢাকা শহরেও একই অব¯’া। ভর্তি হলে ইউজার ফি দিতে হয়। তবু এখনও পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই বিনা পয়সায় ও অল্প খরচায় কিছু চিকিৎসার ব্যব¯’া আছে। এর আগে পিজি হাসপাতালে যে বিনা খরচায় মেডিসিন ও ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের ব্যব¯’া ছিল সেটা এখন উঠিয়ে দিয়ে এই সরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররা বিকালের দিকে ২০০ টাকা ফি নিয়ে রোগীদের প্রেসক্রিপশন দেন! ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ প্রতিটি সরকারি মেডিকেল কলেজকে এখন বিশ্ববিদ্যালয় করে হসপাতালগুলোর অব¯’া পিজি হাসপাতালের মতো করার ব্যব¯’াই হ”েছ। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর স্বা¯’্যবিষয়ক কর্মসূচির মধ্যে কিছুই বলা নেই। এ সব কাজ বাজেটের বাইরে থেকেই নানা কলকাঠি নেড়ে করা হয়। বাস্তবত বাংলাদেশে গরিবের এবং স্বল্প আয়ের লোকের চিকিৎসার ব্যব¯’া শোচনীয়। যে কোন হাসপাতালে গেলেই এটা দেখা যায়। অন্যদিকে ডাক্তাররা নিজেদের ফি বাড়িয়ে, ওষুধ কোম্পানিগুলো ওষুধের দাম বাড়িয়ে এবং বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলো নিজেদের ফি আকাশচুম্বী করে এমন অব¯’া করেছে যাতে এ সব চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি হলে কোনমতে প্রাণ নিয়ে বের হয়ে আসতে পারলেও সর্বস্বান্ত হতে হয়। এ হাসপাতালগুলোর ওপর সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। এ বিষয়ে বাজেটে কোন কথা নেই। না থাকারই কথা। কারণ অর্থমন্ত্রী এবং তাদের মতো লোকেরা তো দেশে চিকিৎসাই করেন না। তারা সামান্য সামান্য কারণেই ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, আমেরিকা যান। তাদের যেমন টাকা-পয়সা আমদানির হিসাব নেই, তেমনি খরচেরও হিসাব নেই!
এ সব বিষয় বিবেচনা করলে দেখা যাবে যে, এই বাজেটে প্রবৃদ্ধি, জনকল্যাণ ইত্যাদি বিষয়ে অনেক কিছু বলা হলেও গরিব ও মধ্যবিত্তের জন্য কিছুই নেই। তবে তাদের গাঁট কাটার ব্যব¯’া পুরোদ¯‘র আছে। এই গাঁট কাটার ব্যব¯’া করা হয়েছে পরোক্ষ কর আদায়ের মাধ্যমে। হাজার রকম জিনিসের ওপর যেভাবে ভ্যাট বসানো হয়েছে তার টাকা শেষ পর্যন্ত ক্রেতাদেরই দিতে হয়। পরোক্ষ করের বোঝা যে গরিব ও নিুআয়ের লোকদেরই বহন করতে হয়, এটা কে না জানে। বাংলাদেশে মোবাইল ফোনসেট আছে ৯ কোটির মতো। ১৫ কোটি জনসংখ্যার দেশে মোবাইল ফোনসেটের সংখ্যা ৯ কোটি হলে সেটার বিপুল অধিকাংশ ব্যবহারকারী যে সাধারণ লোক, গরিব ও মধ্যবিত্ত এতে সন্দেহ নেই। এই মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের রিচার্জ করার সময় কর দিতে হবে শতকরা দুই টাকা এবং প্রত্যেক কলের জন্যও দিতে হবে পৃথক কর! সাধারণ লোকের পকেট এভাবে মেরে অর্থমন্ত্রী নাকি জ্বালানি বাবদ খরচের সং¯’ান করবেন! এ কাজ যে গরিবের স্বার্থরক্ষকদের নয়, তাদের দুশমনদেরÑ এ নিয়ে তর্কের কিছু নেই। এর বির“দ্ধে চারদিকে বেশ তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। এ প্রতিক্রিয়া দেখে সাংবাদিকদের সামনে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এটা তিনি ভাবতেও পারেননি!! ভাবতে পারবেন কীভাবে? জনগণের থেকে কতখানি বি”িছন্ন হলে কোন সরকারের অর্থমন্ত্রী এ কথা বলতে পারেন, এটা বোঝা কঠিন নয়।
এ আলোচনা সংক্ষেপ করার জন্য এবার অন্য এক প্রসঙ্গে আসা দরকার। অর্থ ও পরিকল্পনা কমিশন থেকে বলা হয়েছে যে, এবারে সামরিক খাতে বাজেটে ব্যয় বরাদ্দ বেশি রাখা হয়েছে। বাজেটে ঠিক কত হাজার কোটি রাখা হয়েছে তার কোন হিসাব নেই। তবে বলা হয়েছে, এবার সামরিক বাহিনীর আধুনিকীকরণের জন্য যুদ্ধবিমান, যুদ্ধ নৌজাহাজসহ বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম ও অস্ত্র কেনা হবে। এর কারণ, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষাশক্তি বাড়ানো দরকার দেশকে বাইরের আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য! এর থেকে ফাঁকা, অর্থহীন এবং প্রতারণামূলক কথা কী হতে পারে? কোন দেশের বির“দ্ধে এই প্রতিরক্ষা ব্যব¯’া? ভারত এ দেশ আক্রমণ করবে, এ সম্ভাবনা সামনে রেখে এই ব্যব¯’া? ভারত বাংলাদেশ আক্রমণ করবে, এ চিন্তা এক বড় আহাম্মকি ছাড়া আর কী? তাছাড়া ভারতের মতো পরাক্রমশালী সামরিক শক্তি যদি বাংলাদেশ আক্রমণ করে, তাহলে এখানকার প্রতিরক্ষা ব্যব¯’াকে তারা সাত দিনের মধ্যে ছাতু বানিয়ে দেবে। তাহলে কি আমাদের সম্ভাব্য দুশমন মিয়ানমার? তার সঙ্গে যুদ্ধের জন্যই এই বর্ধিত ব্যয় বরাদ্দ এবং যুদ্ধ সরঞ্জাম? নাকি এ তালিকায় নেপাল ও ভুটানও আছে? সব মিলিয়ে এই মিলিটারি বাজেট যে একেবারে অর্থহীন এবং সম্পূর্ণ অপচয়মূলক, এতে সন্দেহ নেই।
এ ক্ষেত্রে সব থেকে বড় কথা হল, দেশে যেখানে জিনিসপত্রের মূল্যহ্রাসের জন্য সর্বাÍক চেষ্টা দরকার, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, গরিবদের আয় বৃদ্ধি, তাদের খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদির সন্তোষজনক ব্যব¯’া দরকার, সেখানে এই সামরিক ব্যয় যে সম্পূর্ণ এক জনবিরোধী কাজ, এ নিয়ে বিতর্ক করবে কারা? যারা বিতর্ক করবে তাদের শ্রেণীচরিত্র কী?
সব শেষে এটা বলা দরকার যে, সামরিক বাজেট, তার কেনাকাটা ইত্যাদির মধ্যে যেহেতু কোন স্ব”ছতা নেই, কাজেই এ ক্ষেত্রে দুর্নীতির সুযোগ একেবারে অবাধ। এর আগে ফ্রিগেট, যুদ্ধবিমান ইত্যাদি কেনা নিয়ে অনেক মামলা হয়েছে; সে সব মামলা বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আদালতকে দিয়ে খারিজ করিয়ে নেয়া হয়েছে। যা হোক, এই দুর্নীতির বিষয়টি বাদ দিয়েও এ কথা অবশ্যই বলা দরকার যে, দেশে জনগণের মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য যখন পর্যাপ্ত অর্থসম্পদ নেই সে অব¯’ায় এভাবে সামরিক খাতে ব্যয় বরাদ্দ অবশ্যই বড় আকারে কমিয়ে আনা দরকার। এ কাজ না করলে এ সরকার জনগণের সরকার যে নয়, এ বিষয়ে সাধারণ মানুষেরও কোন সন্দেহ আর থাকবে, এটা মনে করার কারণ নেই।
১৬.৬.২০১২
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন